ভুয়া বৈদ্যের দৌরাত্ম্য আইয়ুব খাঁনের কোটি টাকার অট্টালিকা খোঁজ মিলেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তাপুর গ্রামে।
অভিযোগ উঠেছে ভণ্ড বৈদ্য ফুঁ দিয়েই হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তাদের খপ্পড়ে পড়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাড়িতে ঢুকতে চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন বাড়ির প্রধান ফটক। ভিতরে প্রবেশ করতেই দৃষ্টি যায় পাকা দালানে। রহস্যময় এই বাড়িতে সবসময় সদর দরজা বন্ধ থাকে। ভেতর থেকে অনুমতি না মিললে কেউ ভেতরে ঢুকতে পারে না। এই ঘরের ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় কয়েকজন লোক বসে আছে। ভেতরে কাঠের বড় দরজা বন্ধ। বারান্দার সব দেয়ালে ঝোলানো রয়েছে হরিণের শিং ও খুলি। রহস্যময় এই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে কথিত এই চিকিৎসা। জিজ্ঞেস করতেই মমতাজ উদ্দিন নামে এক লোক বলেন আইয়ুব বৈদ্য বিশ্রাম নিচ্ছেন। একটু আগে আসন থেকে উঠে গেছেন। ওনার ইচ্ছা হলে রোগী দেখতে পারেন আবার না-ও দেখতে পারেন।
ওইদিন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আইয়ুব খানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে এই প্রতিবেদক ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করে তার দেখা পাননি। পরে তার সহযোগী বন্ধ ঘরের ভেতর থেকে খবর আনেন, চিকিৎসক অসুস্থ। তিনি ওইদিন কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনকেও চলে যেতে বলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এলাকার সবাই তাকে আইয়ুব বৈদ্য হিসেবে চেনেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তার কাছে গেলে মেলে সব রোগের চিকিৎসা। আইয়ুব খাঁন বৈদ্য এলাকায় একটি আস্তানা গড়ে তুলেন। সেখানে কয়েকজন দালাল রাখা হয়। তারাই সাধারণ মানুষকে এসব বৈদ্যের কাছে নিয়ে আসেন সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে। এসময় সমস্যা সমাধানে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করা হয় তাবিজ-কবজ দেওয়ার কথা বলে।
গ্রামের সহজ-সরল মানুষ এদের কথায় রোগমুক্তিসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশায় দাবি করা টাকা তুলে দেন। কিন্তু সুফল তো দূরে থাকুক ভুক্তভোগীরা বৈদ্যবাড়িতে ঘোরাঘুরি করে খোয়াতে থাকেন টাকা। প্রতারণার জন্য নতুন নতুন ফাঁদ পাতেন বৈদ্য। অনেক সময় ভয় দেখিয়েও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও এসেছে। এছাড়াও রোগীদের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষারও পরামর্শ দিয়ে স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেও নেন কমিশন।
আইয়ুব খানের বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রঘোনা মা-মনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাব টেকনেশিয়ান মোহাম্মদ শাহেদ জানান, ডাক্তার আইয়ুব বিভিন্ন রোগের পরীক্ষার জন্য প্রতি মাসে শতাধিক রোগী পাঠিয়ে থাকেন।
এভাবেই আধ্যাত্মিক দান পাওয়ার কথা বলে ঝাড়ফুঁকের টাকা দিয়ে গড়েছেন অট্টালিকা, কামাই করেছেন লাখ লাখ টাকা। এসবের পাশাপাশি তিনি একই গ্রামের দক্ষিণ নিচিন্তাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিবাহ উপযুক্ত মেয়ের বিয়ে না হওয়া, দীর্ঘদিন সন্তান না হওয়া, বিদেশ যাওয়া, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য কলম পড়া, তাবিজ-কবজ দেওয়াসহ নানা প্রতারণায় টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আইয়ুব খান বৈদ্য। তাবিজ দেওয়ার নামেই চলছে ধোকাবাজি। পরনে সব সময় ধবধবে সাদা পোশাক থাকে। চলনে বলনে আধ্যাত্মিকতার ভাব। এসব করে তিনি মূলত নিজেকে আধ্যাত্মিক চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
এই বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দানু মিয়া বলেন, দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর লোকজন তার কাছে আসেন। চিকিৎসা নয় তিনি ঝাঁড়ফুঁকের মাধ্যমে পাগল ভালো করেন। চিকিৎসা বিষয়ে কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তিনি জ্বিন হাজিরের মাধ্যমে এই চিকিৎসা দেন শুনেছি।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহেবুব বলেন, এই ব্যাপারে আমার জানা নেই। চিকিৎসাবিদ্যা না নিয়ে এভাবে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই। এই বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :