নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ সহ আট দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ সহ আট দফা দাবিতে সোমবার দুপুরে নড়াইলে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সনাতনী শিক্ষার্থী ও জাগ্রত সনাতনী সমাজ নামে একটি সংগঠন এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
পথে পথে বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জেলার দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিক্ষোভ মিছিলসহকারে নড়াইল শহরের বাধাঘাট মন্দির চত্বরে জড়ো হয়। এখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সনাতনী ছাত্র সমাজের সমন্বয়ক রাজিব বিশ্বাস, সমন্বয়ক অমিয় চক্রবর্তী, সূর্য, দিপু, সমিরন,জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি পংকোজ বিহারী ঘোষ, পংকোজ সরকার,রনজিৎ টিকাদার, প্রদ্যুৎ কুমার রায় ওরফে আবুল সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা।
অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক রাজিব বিশ্বাস বলেন, দেশের সরকার পরিবর্তনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়েছে তা বন্ধ করতে হবে। মন্দিরে মন্দিরে হামলা করা হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে ভাংচুর লুটপাট করা হচ্ছে। আমরা এ দেশেরই মানুষ। তিনি বলেন,হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই মিলেমিশে থাকতে চাই।
অপর সমন্বয়ক অমিয় চক্রবর্তী বলেন,আমরা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন করছি না। সুস্থ্য ও স্বাভাবিকভাবে বাচার অধিকারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। তিনি বলেন, সমাবেশে আসার সময় আমাদেরকে পথে পথে বাধা প্রদান করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার জন্য প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।
পরে এখান থেকেএকটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে জড়ো হয়। কথায় কথায় ইন্ডিয়া,আমরা কি দেশের মানুষ না?,আমি কে তুমি কে বাঙ্গালি-বাঙ্গালি,মন্দিরে হামলা কেন জবাব চাই জবাব চাই,আমার মাটি বাংলাদেশ ছাড়বো না ছাড়বো না। মিছিল থেকেিএমন করে গগন বিদারী শ্লোগান দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌছালে আন্দোলনকারীদের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের ৮ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রততম সময়ে শাস্তি প্রদান,ক্ষতিগ্রস্থদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৩। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
৪। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণট্রাষ্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
৫। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
৬। দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায় করতে হবে।
৭। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোষ্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
৮। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করতে হবে। শারদীয় দূর্গা পূজায় ৫ তিন ছুটি দিতে হবে।
জেলা প্রশাসক সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আন্দোলণকারীদের স্মারকলিপি সশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর আশ্বাস দেন। এ সময় নড়াইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা,পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :