জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘুষ, দূর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে বিদ্যালয়ের টাকা তছরূপের দায়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ওই বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদসহ আরও তিনজন সহকারী শিক্ষকদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে আলটিমেটাম দিয়েছে ওই বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। সহকারী শিক্ষকরা হলেন, আজিজুল হক, মিজানুর রহমান। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীরও অভিযোগ তোলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া মোছা. নিশা নামের ল্যাব অপারেটরেও পদত্যাগ দাবি করেন অন্দোলনরতরা।
রোবাবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর বিদ্যালয় চালু হলে রোববার সকাল থেকে তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদের বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, দূর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় তারা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও কয়েকজন সহকারী শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে। শিক্ষকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান প্রধান শিক্ষক। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা, সেনা ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা শুনে নিয়মের মধ্যে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করার আশ^াস দেন। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকসহ আরও তিনজন সহকারী শিক্ষকদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিগত সময়ে তিলকপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকা অবস্থায় প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ তার যোগসাজসে নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত, দূর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়ম করেন। পরে অবৈধভাবে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে বিদ্যালয়ের সভাপতির পুত্রবধু মোছা. নিশাকে নিয়োগ দেন তারা। এতে দীর্ঘ দিন থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছা. জান্নাতুল বলেন, প্রধান শিক্ষক বিভিন্নভাবে আর্থিক অনিয়ম করেছেন। এছাড়া আরও দুই শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে প্রেমালাপ করেন। ওই শিক্ষকদের পদত্যাগ করতে আমাদের এই আন্দোলন। আমরা তাদের পদত্যাগ চাই।
ওই ইউনিয়নের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বিপ্লব হোসেন বাঁধন বলেন, বিদ্যালয়টির রন্ধে রন্ধে অনিয়ম আর দূর্নীতি ঢুকে পড়েছে। আমরা এই ইউনিয়নের সকল প্রকার অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছি। তাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।
প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদের ভাষ্য, আমার উপর আনীত অভিযোগের আইনগত কোন ভিত্তি নেই। আমার কোন কার্যক্রম নিয়ম বহিঃভূত হলে, প্রশাসনিকভাবে যে শাস্তি দেওয়া হবে তা মেনে নিব ও পদত্যাগ করব। এছাড়া অনান্য যেসকল শিক্ষকের বিষয়ে কথা এসেতে তাদের বিরুদ্ধে এর আগে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়েছে। তারা শিক্ষকদের পদত্যাগে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পদত্যাগের বিষয়ে কিছু সরকারী বিধি রয়েছে যা সময় সাপেক্ষ। এ বিষয়ে তাদের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :