সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলার তথা ভাটি অঞ্চলের নাম মধ্যনগর লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া, বঞ্চিত শিক্ষা,চিকিৎসা ও উন্নত যোগাযোগ থেকে। এমনকি সারা বাংলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত রয়েছে মধ্যনগর থানাটি, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের অনেক উন্নয়ন হলেও, এই এলাকাটি রয়ে গেছে উন্নয়নের ছোঁয়ার বাহিরে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একেবারেই নাজুক অবস্থা। নেই যোগাযোগের উন্নত সড়ক, এতে করে বর্ষায় নৌকা, হেমন্তে পায়ে হাটা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। এরমধ্যে হেমন্তের একমাত্র বাহন মোটরসাইকেলে আসা যাওয়া করতে হয়।
স্বাস্থ্যসেবার কথা বললে তো একেবারে এখনো যেনো মান্দাদের আমল। নাই কোনো হাসপাতাল, আর মূমহুষ্য রোগীর বেলায় মৃত্যু অনিবার্য। গুরুতর অসুখ হলে যেতে হয়, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার হাসপাতালে। এছাড়াও উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিত্তশালী বা ধনী পরিবারের ছেলে মেয়ে বড় বড় শহরে পড়াশোনা করে শিক্ষা লাভ করে থাকে এবং গরীবদের বেলায় শিক্ষা লাভ একেবারেই অসম্ভব। গরীব ও মধ্যবির্ত্ত্য পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হয়না এইজন্যই যে- মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়ার কোন উন্নত সড়ক পথ ও যানবাহন না থাকার কারণে।
এছাড়া বর্ষা মৌসুমে একাধিক নৌকা ডুবির ঘটনায় অনেক ছাত্র ছাত্রী নিহত হয়েছে, যার ফলে নিয়মিত বিদ্যালয়ে ক্লাসে হাজির হতে পারে না অনেক ছাত্র ছাত্রী। বিদায়, আবহাওয়া বৈরী হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায়। যার দরুন, শিক্ষকরাও নিয়মিত ক্লাসে পাঠদানের মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এই দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে, শিক্ষার হাড় ৪০ শতাংশ রয়েছে।
এ এলাকার জনজীবন উন্নতি করতে হলে, উপজেলার প্রতিটি গ্রামের সাথে বারমাসি যোগাযোগ সড়কের স্হাপন খুবই জরুরি। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা সুবিধা কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি আজ পর্যন্ত। বিশেষ করে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি মাত্র রাস্তা, মধ্যনগর উপজেলা সদর থেকে ভারতের সীমান্ত এলাকা মহিষখলা বাজারের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি এখন পর্যন্ত। ফলে ২ লক্ষ মানুষ পাচ্ছে না সড়ক যোগাযোগের সুবিধা। এতে করে বর্ষায় নৌকা হেমন্তে পায়ে হাটা, বা একমাত্র বাহন মোটরসাইকেলে আসা যাওয়া করতে হয়। সেই সাথে মধ্যনগর থেকে কলমাকান্দা বারমাসি রাস্তা নির্মাণ হলে, যোগাযোগ ব্যাবস্হার উন্নতির সাথে সাথে এলাকার ছেলে মেয়েদের শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০১৮ সালের দিকে সাব মারসেবল রাস্তার কাজ শুরু হয়ে জমশেরপুর থেকে গলহা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হয়। যার কিছু অংশের কাজ এখনও হয়নি। এবং কাজের মানও ছিল খুব নিম্নমানের, এই কাজের মানদণ্ড নিয়ে অনেকেই বহুবার প্রতিবাদ করলেও এ-র কোন সুফল হয়নি। সাধারণ মানুষের কথার কর্ণপাত কেইবা করে । সেই সময়ে লোকমুখে এও শুনা গেছে যে, বারমসি রাস্তা হলে হাওড়ের পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হবে। তাই সাব মারসেবল রাস্তা হবে, এটাই যদি হয় বারমাসি রাস্তা নির্মাণ না হবার কারণ। তবে কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরের বুক চিরে এত দীর্ঘ রাস্তা সাবেক রাষ্টপতির এলাকায় হবার পরও হাওড়ের পানি নিষ্কাশনের কোন সমস্যা হচ্ছেনা। অথচ মধ্যনগর থেকে কলমাকান্দা মাত্র ছয় সাত কিলো রাস্তা নির্মাণে কি সমস্যা হতো।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :