এখনও অচল ধামরাইয়ের থানা-পৌরসভা, দুর্ভোগে সেবাপ্রার্থীরা

ছেলের জন্ম নিবন্ধন করতে ধামরাই পৌরসভায় এসেছিলেন রাজিয়া খাতুন। ফরম জমা দিয়েই তাকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে। সেবা দিতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। কারণ এই সেবাদানের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই তাদের। শুধু জন্ম নিবন্ধন নয়, কার্যত কোনো সেবাদানেরই অবস্থায় নেই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। একই অবস্থা ধামরাই থানারও। কাগজে-কলমে চালু থাকলেও সেবাদানে ফিরতে পারছে না গুরুত্বপূর্ণ দুই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।

গত ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে উপজেলার শরীফবাগ এলাকায় পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে বিদ্ধ হন এক গৃহবধূ। তবে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এলাকাবাসী মসজিদে মাইকিং করে বের হয়ে কয়েকজন পৌর কমিশনারের কার্যালয়, আনসার ব্যারাক, ইউএনওর বাসভবন, পৌরসভা ও থানায় গিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

ওই ঘটনার পর থেকে কার্যত ভেঙে পড়ে থানা ও পৌরসভার সব কার্যক্রম। গত ১৩ আগস্ট সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে থানা চালু হয়। পুলিশ থানায় ফেরে। তবে ছয় দিনেও এখনও পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি তারা। সব যানবাহন পুড়ে ফেলায় বন্ধ রয়েছে টহল কার্যক্রমও। একই অবস্থা পৌরসভারও।

সরেজমিনে থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে পাওয়া গেলেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) কাউকেই থানায় পাওয়া যায়নি। থানা জুড়ে দেখা মেলে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের।

থানা সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে থানা ভবন, দুইটি অফিসার ব্যারাক, একটি অফিসার অফিস, ওসি বাসভবন, একটি গোল ঘরসহ মত ছয়টি কক্ষসহ ও প্রায় সব কক্ষে ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস করা হয়।

এতে দুইটি পিকআপ, চারটি ডাবল কেবিন, একটি নোহা গাড়িসহ মোট সাতটি গাড়ি ও ছয়টি মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া একটি প্রিজনভ্যান ও ১৫টি মোটরসাইকেল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

থানার ভেতরের অন্তত ৯০% ফাইল ও নথিপত্র সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে বলেও জানা যায়।

রবিবার থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার বাইরে মূল ফটকে থাকা ব্যানার ভাংচুর করা হয়েছে। ভেতরে ঢুকে থানার ভবনের পাশে পাঁচটি পোড়া গাড়ি দেখা যায়। এছাড়া মামলার আলামত হিসেবে রাখা গাড়িগুলোও ভাংচুর করা হয়েছে। থানা ভবনের সামনে দুইটি গাড়ি সম্পূর্ণরুপে পোড়া দেখা যায়। থানার পাশে আরেকটি প্রাইভেট কারেও ভাংচুর করা হয়েছে। 

থানার ভেতরে ঢুকে প্রতিটি কক্ষেই ভাংচুর করা হয়েছে দেখা যায়। জানালার একটি কাঁচও ভালো দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও পোড়ার চিহ্ন।

গত ১৩ আগস্ট থানা চালু হওয়ার পর থেকে শনিবার পর্যন্ত ১৩০টি জিডি ও একটি মামলা হয়েছে বলে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ভাংচুরের ঘটনার পর কয়েক দিন থানায় কোনো কর্মকর্তা আসেননি। সেনা তত্বাবধানে ১৩ আগস্ট অনেকেই আসেন। তবে ওসি এখনও নিয়মিত আসছেন না। থানায় কোনো গাড়ি না থাকায় কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে যেতে পারছেন না। 

এই বিষয়ে থানার কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। থানাতেও তারা ছিলেন না।

এদিকে একই অবস্থা ধামরাই পৌরসভারও। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পৌর ভবনের মূল ফটকের সামনে পড়ে আছে সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া একটি প্রাডো গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল। এছাড়া পুরো ভবনে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন।

পৌরসভা সূত্র জানায়, সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মেয়রের ব্যবহারের একটি প্রাডো গাড়ি, দুইটি গার্বেজ ট্রাক, একটি পিকআপ, দুইটি মোটরসাইকেল, ২০টি ভ্যান, দুইটি বাইসাইকেল। এছাড়া দুইটি লেভেল মেশিন, নির্মাণ সামগ্রী পরীক্ষার একটি যন্ত্র, ২৫টি কম্পিউটার, ১৫টি প্রিন্টার, দুইটি ল্যাপটপ, ৬০টি মাল্টিপ্লাগ লুট করা হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে ২০টি আলমারি, ৩০টি বসার টেবিল, বসার চেয়ার ৩০টি, সাধারণ চেয়ার ২০০টি, দুইটি ফ্রিজ, ২০০টি দরজা-জানালার পর্দাসহ ইলেকট্রনিক বহু সামগ্রী। 

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে অন্তত ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর এই কারণে জন্ম-মৃত্যু সনদ, জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদ, হোল্ডিং নম্বরের সনদসহ সব নাগরিক সেবাদান ব্যহত হচ্ছে। এই পৌরসভায় কমিশনাররা নিয়মিত অফিসে যাতায়াত করছেন। মেয়রও নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন বলে জানা যায়।

ধামরাই পৌরসভার উপ সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) রুহুল আমিন বলেন, কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন। নির্মাণকাজগুলো চলছে। তবে কম্পিউটার না থাকায় নাগরিক সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা যেসব আবেদন পাচ্ছি, রেখে দিচ্ছি। তবে সেগুলো প্রক্রিয়া করা যাচ্ছে না। এক দুই দিনের মধ্যেই সীমিত পরিসরে হলেও কাজ শুরু করা হবে।

একুশে সংবাদ/বিএইচ