ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপ ও অবিরাম বৃষ্টিপাতে স্মরণকালের বন্যার ভয়াবহ রূপ দেখছে ফেনীর তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদের কয়েক লাখ মানুষ। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম এবং ছাগলনাইয়ার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। সারাদেশের সঙ্গে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফেনী জেলা।
বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড, বিজিবি ও নৌবাহিনী যোগ দিয়েছে। ফেনীতে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্ধার সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ফেনীতে উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণের তথ্য জানিয়েছে। তারা স্ট্যাটাসে জানিয়েছে, ‘নৌবাহিনীর আরো দুটো কন্টিনজেন্ট ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে ফেনীতে বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করেছে। ডুবুরি সামগ্রী, লাইফ-জ্যাকেট, স্পিডবোট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে উদ্ধারকার্যে। জরুরি চিকিৎসা সেবা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
সেই স্ট্যাটোসের কমেন্ট বক্সে অনেককে সাহায্যের আবেদন জানাতে দেখা গেছে। নাদিয়া ইসলাম দিনা নামে একজন লিখেছেন, ‘প্লিজ লোকবল বাড়ান। সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে টিম ভাগ করে দিয়ে ছড়িয়ে দিন।আল্লাহ আপনাদের সাহায্য করুন দোয়া করি।’
সাবের (SA B ER) নামে একজন লিখেছেন, ‘ফুলগাজী, পরশুরাম উপজেলায় কোনো পরিবারকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না, অনেকের লাশ পানিতে ভেসে উঠেছে। রেস্কিউ এর ৮ টিম পাশাপাশি আর্মির ৪টি কোস্টগার্ড ও আটকে পড়ে আছে।
আর কোনোভাবে সম্ভব হচ্ছে না উদ্ধার কাজ চালানো। রাত ৩: ৩০টায় সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং সে সাথে ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের রুহিতীয়া গ্রামের অবস্থা ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আপনারা দয়া করে সেখানে গিয়ে মানুষগুলোকে উদ্ধার করেন পরিস্থিতি ভালো থাকতে থাকতে।’
অন্তরা নামের একটি আইডি জানিয়েছেন, ‘কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সলাকান্দি, বাহের গড়া গ্রাম। ৮নং মুন্সিরহাট ইউনিয়ন। দয়া করে উদ্ধার করেন। আমার পরিবার আত্মীয়রা আটকে আছে। 01848179570 আমার মায়ের নাম্বার।।প্লিজ হেল্প। কারো নাম্বারে কল যাচ্ছে না। তবুও চেষ্টা করেন। সরাসরি উদ্ধার করার।’
মোহাম্মদ নূর (Mohammad Nur) লিখেছেন, ‘মোহসেন আলী মিয়াজী বাড়ি। গ্রাম: দৌলতপুর, ২নং ওর্য়াড, ১০নং ঘোপাল ইউনিয়ন, পুরাতন মুহুরিগঞ্জ এখানে ছোট বড় মিলায়ে ৪৫/৫০ জন আটকায়ে আছে। আমাদের ঘরের নিচ তলায় পানি ডুবি ডুবি অবস্থা, তারা বর্তমানে দোতলায় অবস্থানে আছে। আশেপাশে কোনো টিম থাকলে তাদের উদ্ধার করুন দয়া করে।’
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধার তৎপরতায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডও যুক্ত হচ্ছে। বন্যার কারণে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে ডুবছে আশেপাশের জনপদ।
আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে।
এর আগে, দুপুরের দিকে বন্যাকবলিত এলাকায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে স্পিডবোট নিয়ে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে বিজিবি সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবারের শত শত স্বেচ্ছাসেবক দিনব্যাপী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :