অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পথে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় মিলন মুন্সি (৩৫)ও আল-আমিন(৩০) মুন্সি নামে আপন দুই ভাইয়ের একই সঙ্গে সাগরে ডুবে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে,পরিবারের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া । নিখোঁজ ২ব্যাক্তি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর এলাকার পশ্চিম পুয়ালী গ্রামের সিরাজ মুন্সির ছেলে।
বুধবার(৪সেপ্টেম্বর) সকালে দুই সন্তানের সাগরে ডুবে মৃত্যুর গুঞ্জনের খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া ও স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম।
সরেজমিন ও ভুক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানাগেছে, সংসারের হাল ধরার জন্য দু চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ৬ মাস আগে অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া যান মিলন ও আল-আমিন মুন্সি। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে দুই ভাইয়ের সাথে তাদের পরিবারের সমস্ত যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়।
গত মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন মিলন ও আল-আমিন মুন্সি লিবিয়ায় দালালদের গেম ঘরে অবরুদ্ধ থেকে বের হয়ে একটি বোর্ড যোগে ভুমধ্য সাগর পারি দিয়ে ইতালি রওনা দেন। এসময় হঠাৎ করে বোর্ডের তলা ফেটে সাগরে ডুবে গিয়ে বেশ কিছু লোকজনসহ মিলন ও আল আমিন মুন্সি মারা যায় বলে তাদের গ্রামের বাড়িতে খবর আসে।
এ মৃত্যুর খবরে পরিবারের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম। ভুক্তভোগী নিখোঁজ মিলন ও আল আমিনের বাবা সিরাজ মুন্সি বলেন, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর আমার দুই ছেলেকে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে মোট ৩০ লাখ টাকা নেয়। প্রায় ৬ মাস ধরে আমার দুই ছেলেকে সে কোথায় পাঠিয়েছে তার কোন খোজ-খবর সঠিকভাবে দিতে পারেনি। তার কাছে বারবার আমার দুই ছেলের খোঁজ-খবর জানতে চাইলে সে কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। ফরহাদ মাতুব্বর আমার দুই ছেলের কোন খোজ না দিয়ে এই পর্যন্ত বিভিন্ন তালবাহানা করে আসছে। আমার দুই ছেলেকে মৃত্যু অথবা জীবিত ফেরত চাই। আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নাই।
নিখোঁজ দুই ভুক্তভোগীর খালাতো ভাই মানিক জানায়, মিলন ও আল আমিন লিবিয়া গেম ঘর থেকে বের হয়ে একসাথে ভুমধ্যসাগর পথে একই সঙ্গে তিনটি বোর্ড পাড়ি দিয়ে রওনা দেয়। পথিমধ্যে তাদের বোর্ডের তলা ফেটে ডুবে গিয়ে বোর্ডে থাকা সকলে নিখোঁজ হয়। ওই বোর্ডে আমার দুই খালাতো ভাইও ছিল। তাদের মৃত্যু হওয়ার খবরটি মাদারীপুরের আরেক এক যুবক দেশে এসে আমাদের জানিয়েছে। সে অন্য বোর্ডে ছিল ধরা খেয়ে দেশে ফিরে এসেছে। সে দেশে ফিরে আমাদের জানিয়েছে মিলন আর আল আমিন আর নেই।
তবে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বরের দাবি, নিখোঁজ হওয়া দুই ভাইকে শিঘ্রই দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে সময় নিয়েছেন বলে জানান।
এব্যাপারে ডাসার থানার ওসি এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা বিষয়টি জেনেছি। ভুক্তভোগীর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। মিলন ও আল-আমিনের মুত্যুর খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :