গোপালগঞ্জে আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দে নির্মিত একটি সড়ক ইটের সোলিং করার সাত মাসের মাথায় বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। এতে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই এলাকার কৃষকসহ প্রায় ৫০০ পরিবার। কাজে অনিয়মের কারণে এমন হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন।
জানা গেছে, কৃষকদের কৃষিপণ্য পরিবহন ও স্থানীয়দের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ‘দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের’ (ডিআরএমইপি) আওতায় দুটি প্যাকেজে এ কাজ করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের চরবড়ফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বড়ফা ঠাকুরবাড়ী ও দুর্গাপুর খেয়াঘাট থেকে মিরারচর পর্যন্ত সড়কে ইটের সোলিং করা হয়।
২০২২ সালের ১০ আগস্ট কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের এপ্রিলে। কিন্তু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কাজ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সড়কের কাজ তিন-চার মাস আগে শেষ হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি নির্মাণে ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈকত এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এজন্য বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৪৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫৪০ টাকা। ২ হাজার ৯২০ মিটার রাস্তা দৈর্ঘ্যের মধ্যে চরবড়ফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বড়ফা ঠাকুরবাড়ী পর্যন্ত ১৩৫০ মিটারের বেশির ভাগ স্থানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চরবড়ফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বড়ফা ঠাকুরবাড়ী পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থান ধসে ইট খালে পড়ে গেছে। সড়ক টেকসইয়ের জন্য যে গাইডওয়াল করা হয়েছিল, তাও ভেঙে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মেরিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের সড়কটি দু-তিন মাস আগে করে দিয়ে গিয়েছিল। আবার ভেঙে গেছে। ভেঙে গিয়ে খালের মধ্যে চলে গেছে। আমাদের খুব অসুবিধা হচ্ছে। ঠিকমতো এখান দিয়ে হাঁটতে পারছি না। কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সড়কটি আমাদের ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হোক।’
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সবুর মোল্লা বলেন, ‘রোলার মেশিন দিয়ে সড়কের মাটি ও খোয়া চাপা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ৩ নম্বর ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছে।’
ডিআরএমইপি প্রকল্পের জুনিয়র প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করেছি। অনিয়মের বিষয়টি জানি না। পানির চাপের কারণে মাটি পাশ থেকে ধসে গিয়ে সড়ক ভেঙে গেছে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল হক বলেন, ‘যদি সড়কের কোনো সমস্যা হয়, তাহলে ঢাকার প্রকল্প কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হবে।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হলে তিনি কাজে অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :