AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিক

নবজাতক প্রসবের পর মায়ের মৃত্যু, অভিযোগের তীর চিকিৎসকের বিরুদ্ধে


নবজাতক প্রসবের পর মায়ের মৃত্যু, অভিযোগের তীর চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের পোস্ট অফিস রোডস্থ শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিক নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নবজাতক জন্মের পর ভুল চিকিৎসায় বিউটি আক্তার (২৩) নামে এক প্রসূতি নারীর সিলেটে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা। অভিযোগের তীর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে সিলেটের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। মৃত্যুর ঘটনা চাপা দিতে রফাদফার প্রস্তাব দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে পলি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। চিকিৎসক দম্পতির বিচারের দাবি জানিয়েছেন মৃত গৃহবধুর স্বজনরা। 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. রোকসানা পারভিন শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার এবং ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করার অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে।

মৃত বিউটি আক্তার শ্রীমঙ্গল শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা টমটম চালক সুজন মিয়ার স্ত্রী। মৃত্যুর এ ঘটনা নিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলাজুড়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা ডা. রোকসানা পারভীনের অনিয়ম ও কয়েক বছরে বেশ কিছু রোগি মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ি করে নানা মন্তব্য করছেন। 

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও তার স্ত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীন দুজনেই কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। 

নিহত গৃহবধুর পরিবারের অভিযোগ, অন্তঃসত্তা গৃহবধু বিউটিকে (২৩) নিয়ে তার স্বজনরা শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডা. রোকসানা পারভীনের কাছে যান। রোগীকে দেখে ডা. রোকসানা পারভীন আল্ট্রাসনোগ্রামসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে দুপুরের মধ্যে ওইসব পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে পুনরায় হাসপাতালে আসার জন্য বলেন। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী ওই রোগীর স্বামী বেলা আড়াইটার দিকে সকল পরীক্ষার কাগজপত্র নিয়ে পুনরায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সময় শেষ হয়ে গেছে অজুহাতে ডা. রোকসানা পারভীন রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাবার পরামর্শ দেন। 

নিহত বিউটির স্বামী টমটম চালক মো. সুজন মিয়া বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা না পেয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আমি আমার স্ত্রী বিউটিকে শহরের ডাকঘর সড়কের শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করি। সেখানে ভর্তি করার পর দেখি আমার স্ত্রীর সিজার করার জন্য ডা. রোকসানা ও ডা. সাজ্জাদ আসেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়। পৌনে ৭টার দিকে আমার একটি কন্যা সন্তান প্রসব হয়। এর আধা ঘন্টা পর চিকিৎসকরা আমাকে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে যেতে বলেন। আমি সেখানে গিয়ে দেখতে পাই আমার স্ত্রীর পেট এমনভাবে কেটে রাখা হয়েছে যাতে মনে হয় কোন পশু জবাই করা হয়েছে। আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করি এমন অবস্থা কেন। তখন তারা আমাকে জানান রোগীর অবস্থা ভালো নয়, অনেক চেষ্টা করা হয়েছে এখন সিলেটে নিয়ে যান। তাদের কথামতো ওই ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্সযোগে দ্রুত সিলেটস্থ রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। রাতে সেখানে যাবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে বলেন, রোগীকে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। প্রচুর রক্ষক্ষরণ হচ্ছে। মোট ৬ ব্যাগ রক্ত দিয়ে, সেলাই করে নানাভাবে চেষ্টা করেন রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রাত ৩টার দিকে তারা আমার স্ত্রীর মৃত্যুর খবর আমাকে জানান। রবিবার আমি আমার স্ত্রীর মরদেহ শ্রীমঙ্গলে নিয়ে আসার পর বিকেল চারটায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করেছি। ডা. রোকসানা ও ডা. সাজ্জাদের ভুল চিকিৎসায় বা ভুল সিজারে আমার স্ত্রী মারা গিয়েছে। আমি আমার স্ত্রীর মৃত্যুর সাথে জড়িত চিকিৎসকদের  উপযুক্ত শাস্তি চাই।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবব্রত দত্ত হাবুল মুঠোফোনে সিজারিয়ান অপারেশন পরবর্তী মৃত্যুর ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, আমি তো একা এবিষয়ে কিছু করতে পারবো না। এই ক্লিনিকে ১৫জনের শেয়ার আছে। এবিষয়টি সমাধান করতে আজ সকালে আমাদের ক্লিনিকে শ্রমিক পরিবহন নেতা ইউসুফ এবং সাবেক কাউন্সিলর চয়ন এসেছিলেন। এটার সমাধান করতে আমরা তাদেরকে বলেছি আজ (রবিবার) সন্ধায় আমরা ডা. হরিপদ রায়ের বাসায় বসবো। আশা করি উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে একটা সমাধান হবে। আপনাকেও বলবো, আপনিও থাকবেন। 

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চিকিৎসক শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় হাসপাতালে আসার পরও আমি মৌলভীবাজার বা অন্যত্র অপারেশন করাতে বলেছি। পরে তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হন। ওই রোগী দেখে আমরা প্রথমে অপারেশন করতে রাজি হইনি। রোগীর স্বজনরা আমাদেরকে অনেক অনুনয়-বিনয় করার পরে রোগীর অপারেশন করতে রাজি হয়েছি। রোগী সুস্থ করার জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। রোগীর স্বজনরা সবকিছু জেনে এবং লিখিত দিয়েই অপারেশন করিয়েছেন বলেও তার দাবি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ভুল অপারেশনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। রোগীর স্বজনদের পীড়াপীড়িতে অপারেশন করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। ডা. সাজ্জাদ আরও বলেন, ওই রোগীকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে আসার পর আমরা কিন্তু মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে দিছি। পরে বিকেলে শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকের ফোন পেয়ে সেখানের ওটিতে গিয়ে দেখি এই রোগিটাই ওখানে, আর তার অবস্থা খারাপ। ওখানেও আমরা মৌলভীবাজার নিয়ে যেতে বলি। তারপর রোগীর স্বজনদের বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা রোগিকে বাঁচাতে চেষ্টা করি। বাঁচাতে গিয়ে আমরা ফেঁসে গেছি। এখানে রোগিও ভুক্তভোগী আমরাও ভুক্তভোগী। 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, ‘ওই রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। রোগীর স্বজনরা আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাদের আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। নিহতের মরদেহ কবরস্থ করার পর হয়তো তারা আসবেন। এখানে কারো ত্রুটি প্রমাণিত হলে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। তারা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন। 

মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা.  চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের ত্রুটি পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!