মাদারীপুরের ডাসারে অবস্থিত দুই বাংলার জনপ্রিয় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখলের অভিযোগ ওঠেছে সোহেল হাওলাদার নামে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। সেখানে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ছবি, বই, স্মৃতিচারণ নষ্ট ও ভাঙচুরেরও অভিযোগ করা হয়।
ন্যাক্কারজনক এমন ঘটনার জন্ম হয়েছে ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে।
অভিযুক্ত সোহেল হাওলাদার ডাসার উপজেলা বিএনপি সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক। তার বাড়ি উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পাথুরিয়ারপাড় এলাকায়। তিনি ওই ইউনিয়নের ওএমএস ডিলারও। জনপ্রিয় ওই সাহিত্যিকের পৈতৃক ভিটা দখল করে চালের গুদাম বানিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৭ একর ১৫ শতাংশ পৈতৃক জমি রয়েছে। এর মধ্যে দুই একর ৯৭ শতাংশ জমি সরকারের খাসজমি হিসেবে রেকর্ড হয়।
গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লেখকের পৈতৃক ভিটার টিনশেড ঘরে অবস্থিত সুনীল স্মৃতি পাঠাগারের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন বিএনপি নেতা সোহেল হাওলাদার ও তার লোকজন। পরে লেখকের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, বই, আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিচারণসহ একাধিক ছবি ভাঙচুর ও সরিয়ে ফেলেন। এরপর বিএনপি নেতা ওই ঘরে ওএমএসের চাল মজুত রেখে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। এছাড়া, লেখকের বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসকের লাগানো একটি সাইনবোর্ডও ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়।
এদিকে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা বেদখল হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাহিত্যপ্রেমীরা। দখলদারের শাস্তির দাবিও জানান তারা।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান জানান, দুই বাংলার জনপ্রিয় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সোহেল হাওলাদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি তাকে। এজন্য তার কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদারীপুর মহকুমার রাজৈরের আমগ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার কালকিনির পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে।
দেশভাগের পর ১৯৬৫ সালে ভারতে চলে গেলেও মাটির টানে তিনবার পৈতৃকভিটায় ছুটে আসেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাকে স্মরণ করতে ২০০৪ সালে সুনীল সাহিত্য চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। তবে সেটিও আলোর মুখ দেখেনি। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় পরলোক গমন করেন খ্যাতিমান ওই সাহিত্যিক।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :