দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটা একটি শৌচাগার। তবে এটা শৌচাগার না। এটাই প্রতিবন্ধী জহুরার থাকার ঘর। যার সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে বৃষ্টির পানির স্রোত। আরেকটু পানি হলেই ভেসে যাবে তাঁর ওই মাথা গোজার ঠাইটি এমনটাই বললেন তাকে দেখা শোনা করা রুমা বেগম। রবিবার বিকেলে এ দৃশ্য দেখা গেল কোটচাঁদপুরের সলেমানপুর দাসপাড়া সড়কের পাশে।
জানা যায়, জহুরা খাতুন বয়স ৫৮ বছর। সবাই তাকে ডুলি পাগলি বলে চিনেন। ভিক্ষা করে জীবিকা চালাত সে। থাকত মানুষের ঘরের বারান্দায়। অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় এখন তাঁর জায়গা হয়েছে কোটচাঁদপুর পৌরসভার সলেমানপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কের পাশের এই ঝুপড়িতে। ঝুপড়ি ঘরটিও বানিয়ে দিয়েছেন ওই এলাকার ৪ জন নারী । যার মধ্যে রয়েছেন,রুমা বেগম,রাহেলা বেগম,সাজেদা বেগম ও পারভিনা বেগম।
তাঁরা এ অবস্থা দেখে মানুষের কাছ থেকে বাঁশ টিন চেয়ে বানিয়েছেন ঝুপড়ি ঘরটি। সামর্থ্য না থাকলেও খাওয়া আর ওষুধ খরচ চালাচ্ছেন তারাই ভাগাভাগি করে। তবে এভাবে বেশিদিন চালানো তাদের পক্ষেও সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ওই ৪ নারী।
বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উছেন মে,র স্বরনাপন্ন হন কোটচাঁদপুরের কয়েক জন গণমাধ্যম কর্মী। এ সময় তিনি উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা সহায়তা দেন। এরপর থেকে ওই ৪ নারীর সহযোগিতায় চলছে জহুরার জীবন। তবে ইতোমধ্যে জহুরার প্রতিবন্ধী কার্ড হলেও জোটেনি ভাতার টাকাও।
এদিকে দুই দিনের টানা বর্ষণে ভেসে গেছে ওই এলাকার পথ ঘাট। আর পথের পাশেই জহুরার ঝুপড়ি। আরেকটু বেশি পানি হলেই হারিয়ে যাবে তাঁর মাথা গোঁজার ঠিকানাটি এমনটাই বললেন,তাঁর দেখা শোনা করা নারী রুমা বেগম।
তিনি বলেন ,জহুরা ওর নাম। এলাকার মানুষ সবাই ঢুলি পাগলি বললেই চিনেন। সে কোটচাঁদপুরের মানুষ না। বিয়ে হয়েছিল কালিগঞ্জের কোন এক গ্রামের খালেক হোসেনের। ওই সংসারে একটি কন্যা সন্তানও হয় তাদের। এরপর হঠাৎ করে মারা যান স্বামী। সেও ৩০ বছর পার হয়ে গেছে।
সেই থেকে আশ্রয় নেন কোটচাঁদপুরের সলেমানপুর দাস পাড়ায়। থাকতেন মানুষের বারান্দায়। জীবিকার জন্য করতেন ভিক্ষা। তা দিয়ে নিজে খেতেন আর মেয়েকে মানুষ করতেন। এভাবে মেয়েটি বড় করে স্থানীয়দের সহায়তায় বিয়ে দেন । ওই সংসারে মেয়ের দুইটি বাচ্চা আছেন। আছেন তাঁর জামাই। হঠাৎ করে ওই মেয়েটি গেল দুই বছর আগে মারা যান।
ভেঙ্গে পড়েন জহুরা খাতুন। বয়সের ভারে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে সে। সম্প্রতি অনেক অসুস্থ্য জহুরা। ভিক্ষা করার সামথ্য হারিয়েছে এখন।
তিনি বলেন, ওই অবস্থা দেখে মানুষের কাছ থেকে বাঁশ আর টিন চেয়ে এনে পরের জায়গায় ঝুপড়ি ঘরটি বানিয়ে দেয়া হয়। সে থেকে সামর্থ্য না থাকলেও খাওয়া আর ওষুধ খরচ চালাচ্ছেন তারাই ভাগাভাগি করে।
তবে এভাবে বেশিদিন চালানো তাদের পক্ষেও সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন তারা। রুমা বেগম সরকারি সহায়তা ছাড়াও স্থানীয় মানুষকে তাঁর পাশে দাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উছেন মে বলেন,তিনি যদি কোন পূনবাসন কেন্দ্রে গেলে পাঠানো সম্ভব। আর যদি যেতে না চান,তাহলে দেখি সমাজ সেবা অফিসের মাধ্যমে কোন ব্যবস্থা করা যায় কি।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :