বান্দরবানে থানচিতে সাঙ্গু নদীর উজানে রিজার্ভের দুর্গম এলাকায় জুম চাষীদের চলতি মাস শেষে দিকে তাদের জুমের ধান কাটতে শুরু করবে, সেই পর্যন্ত দুর্গম লেইক্রী এলাকায় কিছু পরিবারের খাদ্যঘাটতি থাকলেও কোনো পরিবার না খেয়ে থাকবে না। সেখানে কয়েক দফা ত্রাণ বিতরণ করায় সংকটে পড়া পরিবারগুলো এখন অনাহারে নেই। তবে সেখানে এখনো পর্যাপ্ত খাবারও নেই। যদিও চলতি মাসের শুরুতে কিছু পরিবারের খাদ্যঘাটতি ছিলেন। জুমের ধান পাকঁবে আরও ১২ থেকে ১৫ দিন পর, চলতি মাসের শেষে দিকে নতুন ধান কাটতে শুরু করবে। সে পর্যন্ত ত্রাণ সরবরাহ করার জরুরি বলে জানিয়েছেন- স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধি।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা আরো জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান পাহাড়ে সাঙ্গু নদের উৎপত্তিস্থলে মেনহাত ম্রোপাড়া, বুলুপাড়া, ডলুঝিরি, থাংকোয়াইপাড়া ও পানঝিরি পাড়াগুলোতে পরিবারের বেশি খাদ্যসংকটে দিন পার করেছিল।যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকার দরিদ্র জুমচাষিদের প্রতিবছরে এই সময় আসলেই কমবেশি মৌসুমি খাদ্যঘাটতি দেখা দেন। মে-জুন মাসের মাঝামাঝি জুমের উৎপাদিত ধান-চালের মজুত শেষ হয়ে যায়। জুমের পরবর্তী ফসল বা ধান না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই অভাব চলে। থানচির দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নে প্রতিবছর এই সমস্যা কমবেশি মেটাতে হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।
সুত্রে জানা গেছে, থানচির দুর্গম ওই এলাকায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের বেশি পাড়াগুলোর অবস্থান। ওই এলাকায় মেনহাত ম্রোপাড়ায় ২০ পরিবার, বুলু ম্রোপাড়ায় ১৪টি পরিবার, ক্যৌওয়াইক্ষ্যং ম্রোপাড়া ১৬ পরিবার, ম্রক্ষ্যং ঝিরিপাড়ার ৫ পরিবার, কংকং ত্রিপুরাপাড়ার ৮টি পরিবার, য়ংনং ম্রো পাড়াসহ আরও কয়েকটি পাড়ার মিলিয়ে শতাধিক পরিবারের খাদ্যভাব দেখা দিয়েছেন।
আরো জানা যায়, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড রেমাক্রী ইউনিয়নের সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পড়েছে। সাঙ্গু নদের উজানে নৌকাযোগে যাওয়া ছাড়া এলাকাগুলো সব ধরনের যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। ওই দু,টি ওয়ার্ডে ১৯টি পাড়ায় ৩শত ১৯টি পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬শত জন। এদের মধ্যে ১শত ৭০টির মতো অতিদরিদ্র পরিবার মৌসুমি খাদ্যঘাটতিতে বেশি সংকটে পড়েছে।
এদিকে রেমাক্রী ইউপিতে ওই এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার বিদ্রজয় ত্রিপুরা বলেন, দুর্গম এলাকায় কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দাদের খাদ্যঘাটতি থাকার পরে চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) শুরুতে পর্যাপ্ত না হলেও সরকারি-বেসরকারি কিছু ত্রাণ পেয়েছেন। যেহেতু জুমের পুরোদমে ধান পাঁকতে কয়েক সপ্তাহের সময় লাগতে পারে, সেহেতু ওই দুর্গম এলাকায় মানুষের চলতি মাস শেষ পর্যন্ত থাকবে খাদ্যভাব।
তিনি আরো বলেন, ওই এলাকায় জুম চাষীদের জুমের ফলন বা ধান পাঁকতে আরো কয়েক সপ্তাহের সময় লাগবে। এখন কারও কারও জুমে আগে বপন করা ধান পেকে উঠেছে। ওই ধান পাতিলে ভরে চুলার আগুনে শুকিয়ে চাল করে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। জুমের ধান পাকা পর্যন্ত আরও ১২ থেকে ১৫ দিনের জন্য ত্রাণ জরুরি বলে জানান তিনি।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন জানান, খাদ্যঘাটতির পূরনে এপর্যন্ত সরকারিভাবে দুই টন ও বেসরকারিভাবে পাঁচ টন চাল লেইক্রি এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিছু অভাব থাকলেও কেউ না খেয়ে নেই। কয়েক দিনের মধ্যে জুমের ধান পাকলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। জুমের পাঁকার ধান কাটলে মিটবে-পুরণ হবে খাদ্যঘাটতির।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :