আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আব্দুস শহীদের দখলে থাকা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাঁচ একর জায়গা পুনরুদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আমরা উদ্ধারকৃত জায়গায় লেবু গাছগুলো কেটে বন্যপ্রাণীর খাদ্য উপযোগী গাছের চারা রোপণ করি। বিশেষ করে রোপণ করা হাছগুলোর মধ্যে চাপালিশ, বয়রা, অর্জুন, হরিতকি, জাম, বকুলসহ প্রায় দশ প্রজাতির পাঁচ হাজার গাছ রোপণ করা হয়।
গত রোববার সকাল দশটায় ১৩১জন শ্রমিক নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের স্টুডেন্ট ডরমিটরির সামনে লাউয়াছড়ার জায়গা উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান, রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘকাল ধরে অবৈধভাবে সাবেক সাতবারের এমপি আব্দুস শহীদ সরকারের পাঁচ একর জায়গা দখল করে রেখেছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে বন বিভাগ বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ার কারণে তার লোকজনের বাধায় বনের জায়গাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মচারী বলেন, লাউয়াছড়ার জায়গাটি আমরা অনেক আগেই উদ্ধার করতে পারতাম; কিন্তু সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি ও নেতা হওয়ায় তাঁর ক্ষমতার দাপটে জমিটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গতকাল রোববার জায়গাটি দখলমুক্ত করা হয়। এখানে পাঁচ একরের বেশি জায়গা হবে। কিছু জায়গা লেবু গাছ ছিল, কিছু জায়গা ফাঁকা পড়ে ছিল। দখল করে লাগানো লেবুগাছ তুলে হরিতকি, বহেড়া, জাম ইত্যাদি বন্য প্রাণীর খাদ্য উপযোগী গাছের চারা রোপণ করা হয়।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুস শহীদ এমপির বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি, নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সংসদ সদস্য হয়েও বন বিভাগের জমি দখল করে চা বাগান তৈরি, রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, ফ্ল্যাট ক্রয়সহ স্ত্রী ও নিজ সন্তানদের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য দুদক পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়াও তার স্ত্রীর নামে কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়িসহ দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের গড়ার অভিযোগ রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে ১৯৯১ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। একই আসন থেকে এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালে নির্বাচিত হন। ২০০৯- ২০১৪ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, ২০০১- ২০০৬ পর্যন্ত সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ, এবং ১৯৯৬- ২০০১ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ গণ মহাবিদ্যালয়ে যোগদান করে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন আব্দুস শহীদ। তিনি বঙ্গবন্ধু শিশু অ্যাকাডেমি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি প্যানেল স্পিকার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর সাবেক সাতবারের এমপি শহীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :