বান্দরবানে থানচিতে জুম চাষীদের জুমের ফলন ধান কাটতে শুরু করেছে। একদিকে বৈরী আবহাওয়ার প্রতিকূলতা কারণে চলতি বছরে জুমের ধান ফলন ভালো হয়নি, অন্যদিকে জুম চাষের আগাছার দমনে বিভিন্ন ধরনে কীটনাশক ব্যবহারে জুমের ধানের ফলন সঙ্গীর মারফা, ভুট্টা, তিল, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, বেগুন ইত্যাদি ভাল ফলন পাননি বলে জানিয়েছেন- জুম চাষীরা।
জুম চাষীরা আরো বলেন, এক সময় জুম চাষীদের জুমের ফলন উপর নির্ভরশীল। জুমের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করে অর্থজোগান করতো। বর্তমানে পাহাড়ে জুম চাষীদের জুমের পরবর্তীতে বিভিন্নরকম ফলাদি বাগান চাষের ঝুঁকছেন, ফলে জুম চাষের কমে যায়।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের মধ্যে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গলে কেটে এক প্রকার চাষাবাদ করা পদ্ধতিই হল জুম চাষ। জুমের ধান পাকার কারনে পাহাড়ের এখন নতুন ধান কাটার শুরু হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে আগেকার তুলনায় জুম চাষ অনেকাংশে কমে আসলেও এখনো প্রায় ৬০ শতাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির অভাবে অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল হতে হয় এখানকার জনগোষ্ঠীদের। এসময় পাহাড়ে বেশিরভাগ জুমের ধান পেকে যাওয়ায় কৃষকেরা পাকা ধান কেটে ফসল সংগ্রহ করা শুরু করেছে।
থানচি কৃষি দপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলা ৪ ইউনিয়নের চলতি অর্থবছরে ২হাজার ৪শত ১৩ হেক্টর জায়গায় জুম চাষ করা হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদন চাউল ৩ হাজার ১০মেঃ টন, ২হাজার ৬শত ৫৭জনের জুম চাষী রয়েছে। চলতি বছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের কমলা বাগান পাড়া, নাইক্ষ্যং পাড়া, বাগান পাড়া, নাইন্দারী পাড়া, ক্যৌয়াইজৈ পাড়া এবং উপজেলা সদরে আপ্রুমং পাড়া, মুইখয় পাড়া, মেকহা পাড়াসহ সুব্রাইনি পাড়াগুলোতে জুম চাষীদের জুমের ধান কাটার শুরু করেছে। তাদের কারো কারো ৪ হাড়ি পরিমাণে ধান জুম চাষ করার হচ্ছে তবে বেশিভাগই ২ থেকে ৩ হাড়ি পরিমাণে ধান জুম চাষাবাদের করে থাকেন।
এদিকে জুম চাষির মিলন ত্রিপুরা, পুসিংমং মারমা, মুংগহা ত্রিপুরা, ফিলিপ ত্রিপুরা জানান, এবছরে জুমের পাঁকা ধানগুলো আজকের প্রথমবার ধান কাটতে শুরু করেছি। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সময়মত ধান কাটতে না পারায় পাঁকা ধান কিছু অংশ মাটিতে পড়ে গেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জুমের ফলন ধান তেমন ভাল হয়নি।
তাঁরা আরো জানান, ধান ছাড়াও জুমের তিল, ভূট্টা, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, বেগুন, টক পাতা, ও হলুদসহ বিভিন্ন ফসলের মিশ্রনে চাষ করা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার প্রতিকূলতা কারণে ধানের ফলন সঙ্গীর জুমের বিভিন্নধরনের শাক-সবজিসহ ফসলাদি ফলন ভালো না হওয়ায় বাজারজাত করতে না পারলে লোকসানের আশঙ্কার দেখা দিয়েছেন। এবং জুমের বিভিন্ন রঙের গাঁদাফুলসহ সূর্যমুখী ইত্যাদি ফুলের চাষ করা হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জুম চাষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন– জুম চাষীরা।
থানচি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষন ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাশ গুপ্ত জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের উপর নানান কর্মসূচির ও পরামর্শের ফলে গতবছরের তূলনায় পাহাড়ের এবছর চাষাবাদ ভালো হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জুম চাষীদের জুমের ফলন উপর কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, জুমের পাঁকা ধান কাটার শুরু করেছে, ফসল সংগ্রহের কাজ চলবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বলে জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :