জামালপুরের মাদারগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙ্গনে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল গ্রাম । এতে ছোট হয়ে উপজেলার মানচিত্র। গত ৩ বছরে প্রায় ৪০০ পরিবারের ভিটেমাটি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বিলিন হয়েছে স্কুল,মসজিদও। গত ৩ মাসের ভাঙ্গনেই প্রায় ১৫০টি পরিবার সহায় সম্বল হারিয়েছেন। ভাঙ্গণ এখনো অব্যাহত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো) জামালপুর এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোন
ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তভোগীরা। বুধবার সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায় পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষেরা বসতবাড়ি ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। সবহারানো মানুষগুলোর শেষ আশ্রয় হয়েছে অন্যের জমিতে, খোলা আকাশের নিচে ।এখনো হুমকির মুখে পাকরুল এলাকার শত শত বসতবাড়ি, আশ্রয়ন কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গাছপালা, ফসলি জমিসহ রেড ক্রিসেন্ট কমিউনিটি মিটিং সেন্টার এবং হিদাগাড়ী
কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝুঁকিতে রয়েছে পাশের গ্রাম হিদাগাড়ী ও কোয়ালীকান্দি গ্রামসহ ।
ভোক্তভোগীরা বলেন, ভাঙ্গন শুরু হলেই পানিউন্নয়ন বোর্ড থেকে জিওব্যাগ ফেলা হলেও তা কোন কাজেই আসেনা, বরং বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনার সাথে ওইসব জিওব্যাগও নদীগর্ভে বিলীয় হয়ে যায়। তাই জিওব্যাগ নয়, নদীর ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বাঁধের দাবি তাদের। নদী ভাঙ্গণের শিকার হয়ে আশ্রায়ন প্রকল্পে ঠাই পাওয়া নারী রিনা বেগম বলেন, নদীভাঙ্গণে শিকার হয়ে আশ্রায়নে ঠাই নিয়েছি। সেই আশ্রায়ন নদীগর্ভে চলে যাবার পথে এখন আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো। নদীভাঙ্গণের শিকার অহিরুদ্দি দাদার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি ও সম্পত্তি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমরা অন্যের জমিতে কোন রকম আছি। সেই জমিও যদি বিলিন হয় তাহলে অন্যদেশে আমাদের চলে যেতে হবে। তাই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইসমাইল বলেন, কি বলমু বলার মত ভাষা নেই,এই যমুনা নদী আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করেছে।
এখন আমরা অন্যের জায়গায় কোনমতে বসবাস করছি। এভাবে ভাঙ্গন চলতে থাকলে হয়তো অন্য এলাকায় চলে যেতে হবে। স্থানীয় যুবক মিলন অভিযোগ করে বলেন, গত ৩ বছর ধরে আমাদের পাকরুল গ্রাম নদীভাঙ্গণের শিকার। সরকার যদি কার্যকরী ব্যবস্থা নিত তাহলে আমাদের গ্রামটি থেকে যেত এবং মাদারগঞ্জের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেত না। স্থানীয় ইউপি সদস্য আহজার উদ্দিন ফকির বলেন,গত ৩ বছরে ভাঙ্গণে আমাদের পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৪০০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন। সরকার যদি ভাঙ্গণ রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয় তবে পাকরুল এলাকার ৪০ ভাগ এখনো রক্ষা করা সম্ভব। তাই অতি দ্রুত সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভাঙ্গণ রোধে যেন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১৫শ মিটার জায়গায় ভাঙ্গন ঠেকাতে ১৬শ মিটার এলাকা জুড়ে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে ১৫শ মিটার অংশে নদীর তীর সংরক্ষনের কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে যা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর বাস্তবায়ন হলে ঐ এলাকার নদী ভাঙন অনেকটাই লাঘব হবে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :