গত ১৭ বছরের মধ্যে এই প্রথম অনাড়ম্বর জন্মদিন পালন হচ্ছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দলের সভাপতির ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুক পেজে স্টাটাস দিয়েছে দলটি। এর বাইরে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি। গত বৃহস্পতিবার ভোরে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায় তার দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য কামনা এবং দেশবাসীর জীবনে চলমান দুর্যোগ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দোয়া, মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
তবে, ব্যতিক্রম ছিল শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জ। সেখানে সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজ ক্যাম্পাসে দিনটি উপলক্ষ্যে কেক কাটে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। গোপালগঞ্জে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে কেক কেটেছেন সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে জন্মদিন উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা করতে চাইলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। শনিবার দুপুরে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ ক্যাম্পাসে এই ঘটনা ঘটে। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা করে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। এ সময় শোভাযাত্রাটি কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে বঙ্গবন্ধু সড়কে বের হতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও যানবাহন ভাঙচুর করতে পারে এমন শঙ্কায় শোভাযাত্রায় বাঁধা দেয়া হয়েছে বলে জানান ওসি। এর আগে, কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে কেক কেটে শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন পালন করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ব্যাপক পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ফলে জন্মদিন পালন করতে পারেনি আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো। এদিন গোপালগঞ্জ সরকারি মুকসুদপুর কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাধারণ অসহায় হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে সভানেত্রী রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডি ৩/এ এর সামনে সাবেক ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে গরীব ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। এসময় জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়। সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আনোয়ার হোছাইন, সাবেক গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মুকিব মিয়া,সাবেক সহ-সম্পদক এনামুল হক প্রিন্স,সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক তড়িৎ চৌধুরী প্রমুখ।
দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণকালে আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নেজেদের পরিকল্পনার কি জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, “বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এইদেশের জনগণ আবারো তাদের নেতৃত্বের আসনে বসাবে।আমরা বিশ্বাস করি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাবার জন্য জতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প কোন নেতৃত্ব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে নাই। “তাই আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সততা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছি তারা মনে করি বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এইদেশের জনগণ আবারো তাদের নেতৃত্বের আসনে বসাবে।
উল্লেখ্য,১৯৪৭ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিগত ১৫ বছর ঘটা করে দিনটি পালন করা হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার নেই তেমন কোনো আয়োজন। বলা যায়, নীরবে-নিভৃতে কেটে যাচ্ছে ছাত্র-জনতা হত্যার খড়গ মাথায় নিয়ে দেশত্যাগ করা একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই রাজনীতিবিদের জন্মদিন। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের আহ্বান জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। যদিও দুপুর পর্যন্ত সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘটা করে বা ছোট পরিসরে উদযাপনের তেমন কোনো খবর মেলেনি। পোস্টে দলীয় সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায় তার দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য কামনায় প্রার্থনার আয়োজনের কথা বলা হয়। তেমন কোনো খবরও এখন পর্যন্ত মেলেনি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :