মাগুরার শালিখা উপজেলার অভয়াচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিশির সরকারের বিরুদ্ধে স্কুলে কখনো ক্লাস না নিয়েও ১৩ বছর ধরে অবৈধভাবে বেতন তোলার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) হিসেবে কর্মরত।অভিযুক্ত শিশির মাগুরা সদর উপজেলার আসবা গ্রামের যুগল সরকারের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদারের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার পর কখনো নিয়মিত স্কুলে আসেননি শিক্ষক শিশির সরকার। এমনকি শিক্ষক হিসেবে তাকে কখনো ক্লাসে দেখেননি বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। তবে তিনি নিয়মিত তুলে নিতেন বেতন ভাতা।
শিশিরকে প্রায় সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাবেক সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদারের সঙ্গে দেখা যেত। সংসদ সদস্যের এপিএস হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মাস শেষে স্কুলে গিয়ে একবারে সব স্বাক্ষর করতেন তিনি। আর তুলে নিতেন স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন এবং ব্যাংক থেকে বেতনের সরকারি অংশ। সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার সখ্যতা থাকায় কেউ বিষয়টি নিয়ে এতদিন কথা বলতে পারেননি।
বিদ্যালয় ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১২ মার্চ অভয়াচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন শিশির সরকার। এরপর থেকেই নিয়মিত বেতন তুলেছেন তিনি। গত আগস্ট মাসের বেতনও পেয়েছেন শিশির। সর্বশেষ গত ৬ আগস্ট বিদ্যালয়ে এসেছিলেন শিশির। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সেদিন দুই মাসের ছুটির দরখাস্ত দেন তিনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছুটি অনুমোদন দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মমতা মজুমদার বলেন, সহকারী শিক্ষক শিশির সরকারের স্কুলে না এসে বেতনে তুলে নেওয়ার বিষয়টা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্যের এপিএস থাকায় তাকে স্কুলে আনার মত এত ক্ষমতা আমার ছিল না। তাই তাকে কখনোই কিছু বলতে সাহস পাইনি।
এ বিষয়ে জানতে শিশিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। সেদিন থেকেই বীরেন শিকদার আত্মগোপনে আছেন। এ কারণে তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ বলেন, শিক্ষক শিশিরের ক্লাসে না গিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর অবৈধভাবে বেতন তুলে নেওয়ার ঘটনাটি অবশ্যই নেককারজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, শিশির সরকারের ক্লাস না করিয়ে বেতন তোলার বিষয়টি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মমতা মজুমদার। এ বিষয়ে এর আগে কেউ আমাদের অভিযোগ দেননি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :