নওগাঁর মান্দায় স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন ঘাতক স্বামী। শনিবার গভীর রাতে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের ভারশোঁ পশ্চিমপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রবিবার সকালে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এসময় মরদেহের পাশ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শাবল ও একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন, ভারশোঁ পশ্চিমপাড়া গ্রামের আতাউর রহমান (৭৬) ও তার স্ত্রী মরিয়ম ওরফে মারুনি বিবি (৬৫)।
স্থানীয়রা জানান, আতাউর রহমানের ৪৫ বছরের দাম্পত্য জীবন। তাদের বিবাহিত তিন মেয়ে আছে। মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে থাকেন। তারা স্বামী -স্ত্রী নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। কিন্তু তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলোহ চলছিলো।
আতাউর মাঝেমধ্যে তার মেয়েদেরকে বলতো যে, তোদের মাকে কুৎসিতভাবে মেরে ফেলবো। এরই এক পর্যয়ে শনিবার রাত সোয়া ১ টার দিকে আতাউর তার ছোট মেয়ে হরিছাকে কল করে বলে যে, তোর মাকে মেরে ফেলেছি এবং আমি নিজেও গ্যাস ট্যাবলেট খেয়েছি। আমিও মরে যাব। হারিছা তখন প্রতিবেশী শাকিল (১৫) কে কল করে বলে যে, আমার মা ও আব্বার কাছে যাও। দেখতো কি হয়েছে? শাকিল প্রতিবেশী কয়েকজন লোককে নিয়ে এসে দেখে যে, বাড়ির দরজা গেট বন্ধ। তখন সকলের সহায়তায় দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পায় যে, মরিয়ম ওরফে মারুনি বিবির লাশ বারান্দায় মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং আতাউরের লাশ বারান্দায় চৌকির উপর পড়ে আছে।
মরিয়মের মাথায় শাবলের আঘাতে মগজ বের হয়ে গেছে। পাশেই সেই রক্তমাখা শাবল পড়ে ছিল। আতাউরের পাশে টেবিলে লেখা একটি চিরকুট আছে। সেই চিরকুটে তাদের দাম্পত্য জীবনের কলোহ, তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকারসহ তার নিজের আত্মহত্যার কথা লিখে গেছে।
চিঠিতে লেখা ছিল তার ও তার স্ত্রীর দাফনের জন্য টেবিলের ড্রয়ারে ৪ হাজার টাকা রাখা আছে। তথ্যমতে টেবিলের ড্রয়ারে ৪ হাজার ৩০০ টাকা পাওয়া গেছে।
নিহতের প্রতিবেশী শাকিল বলেন, ‘পারিবারিক বিষয় নিয়ে নিহতদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিলো। শনিবার গভীর রাতে আতাউর রহমানের ছোট মেয়ে হারিছা আমাকে ফোনে জানায় তার বাবা আত্মহত্যা করতে পারেন। বিষয়টি জরুরিভাবে দেখার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন।’
প্রতিবেশী শাকিল আরও বলেন, হারিছার এমন সংবাদে আশাপাশের লোকজনকে নিয়ে আতাউরের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকির পরও তাদের সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। পরে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর দুইজনের মরদেহ পাওয়া যায়।
মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সুরুতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় মারুনি বিবির মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মরদেহের পাশ থেকে একটি শাবল ও চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামী আতাউর রহমান আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :