শিক্ষক জাতি গড়ার প্রত্যক্ষ কারিগর। একটি উন্নত, সাবলম্বী, সুস্থ, মানবিক ও আধুনিক সমাজ গঠনে সর্বাগ্রে যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি শিক্ষক। শুধুমাত্র পেশাগত দায়িত্ব দিয়ে বিচার করলেও সমাজের সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল পেশা শিক্ষকতা।
যেহেতু পেশাগতভাবে এটি প্রধান সুতরাং মানগত মর্যাদাও প্রধান হওয়া যৌক্তিক। কিন্তু অতি পরিতাপের সাথে বলতে হচ্ছে যে, আমাদের দেশে এর বিপরীত অবস্থা বিদ্যমান। অর্থাৎ পেশাগত ভাবে প্রধান হলেও জীবনমান গত ভাবে সব পেশার পিছনে। বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের মাত্র ১.৮৯ শতাংশ। বিশেষভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে পাহাড়সম বৈষম্য শিক্ষক হিসেবে সামাজিক মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছে, প্রশ্নবিদ্ধ করেছে জীবনযাত্রার মান। বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি আকর্ষন করতে সুদীর্ঘ বছর থেকে ব্যর্থ হয়ে আসছে। ফলে ১১তম গ্রেডে প্রাথমিক বেতন কাঠামো ১২৫০০ টাকা, যা একজন অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত গার্মেন্টস শ্রমিক অপেক্ষা কম।
একদিকে যেমন হাস্যকর অন্যদিকে তেমনি হৃদয় বিদারক যে, সমুদয় শিক্ষকদের প্রদেয় বাড়িভাড়া মাত্র ১০০০ টাকা। যা বাংলাদেশের শিক্ষা নগরী রাজশাহীর তৃতীয় শ্রেণির মেসে থ্রি সীটের রুমে এক বেডের নির্ধারিত ভাড়া অপেক্ষা কম। আরো জেনে অবাক ও বিস্মিত হবেন যে, শিক্ষকদের মাসিক চিকিৎসা ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা। অথচ নিভৃত পল্লীতে একজন পাসকরা ডাক্তারের পরামর্শ ফি মিনিমাম ৬০০ টাকা। নিষ্পেষিত ও উৎসবহীন ব্যক্তি জীবনে বছরে মাত্র দুইবার আনন্দের উপলক্ষ্য আসে শিক্ষকদের। কিন্তু উপরওয়ালাদের এতই ক্ষীণ দৃষ্টি যে, বছরে দুইবার উৎসব উদযাপনে ভাতা দেওয়া হয় বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ। অর্থমূল্যে যার পরিমান সাড়ে তিন হাজারের কম। ঊর্ধ্বমূল্যের তেল নুন লাকড়ির বাজারে একে তো নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার উপর পরিবারের সাথে উৎসবের দিনগুলো পাড়ি দেওয়া কতটা লজ্জার ও অপমানের তা একজন ভুক্তভোগী শিক্ষক ছাড়া আর কেউ বুঝবেন না।
যাদের সাথে তুলনা করে বৈষম্যের অভিযোগ তাদের সাথে কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। একই সিলেবাস, একই রুটিন, একই কার্যদিবস ও কার্যক্ষেত্র। আত্মপক্ষ সমর্থনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ হয়তো নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা অযুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে পারেন। সেক্ষেত্রেও জানিয়ে রাখা ভালো যে, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারি শিক্ষক নিয়োগের চেয়েও বেশি স্টেপ যাচাইয়ের মাধ্যমে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে, বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি এতো বেশি অবহেলা কেন?
নানাবিধ প্রশ্নবিদ্ধ কারণে মেধাবীরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছে, ৪র্থ গণ বিজ্ঞপ্তির পরিসংখ্যান তার প্রমাণ। প্রকৃতপক্ষে দেশ ও জাতির প্রকৃত উন্নয়ন প্রত্যাশা করলে নাগরিকদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার বিকল্প নেই। এই মর্মে প্রকৃত মেধাবী ও ডেডিকেটেড পারসনদের এ পেশায় আকৃষ্ট করাতে না পারলে সার্বভৌমত্বের আশংকায় শঙ্কিত থাকতে হবে। ইতিহাস স্বাক্ষী, দেশপ্রেমিকহীন স্বাধীন জাতি দীর্ঘদিন স্বাধীনতার রস আস্বাদন করতে পারে না। কাজেই; সামাজিক মর্যাদা, জীবনমান বৃদ্ধি, নিশ্চিন্তে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকল প্রকার বৈষম্য দূরীভূত করে জাতি গড়ার কারিগর মহান শিক্ষকদের যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় দাবী মেনে শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণের ঘোষণা প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরালো আবেদন জানাচ্ছি। জাতীয় শিক্ষক দিবস উপলক্ষে পৃথিবীর সকল শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন এবং বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :