বরগুনার আমতলী পৌরশহরের কোলঘেঁষা চাওড়া নদী কচুরি পানায় ছেয়ে আছে বছরের পর বছর , পঁচে গেছে পানি। পরিণত হয়েছে মশা আর মাছির কারখানায়। মশার আর মাছির উপদ্রপে অতিষ্ঠ নদী তীরবর্তী চাওড়া, কুকুয়া, হলদিয়া ও সদর ইউনিয়ন হাজার হাজার পরিবার। আর মশা আর মাছির কারনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নদীর তীরে বসবাসরতরা।
আমতলী উপজেলার চাওড়া, কুকুয়া, হলদিয়া,সদর ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামের ওপর দিয়ে ত্রিভুজ আকৃতির প্রভাবিত এ নদীর দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। ছাব্বিস কান্দা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, ‘সকাল-বিকাল মশার কামরে আমরা অতিষ্ঠ।’ চন্দ্রা গ্রামের সজিব মিয়া জানান, ‘কচুরিপানার কারণে খালের পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার মশার জ্বালা, ঘরে থাকতে পারছিনা।’ কুকুয়া ইউনিয়নের মনির বলেন বলেন, ‘আমাগো দিগে কেউ চায় না, একদিকে পচাঁ ওডা, অপরদিকে মশার অত্যাচার ।
ঘুঘুমারীর মোকলেছ মিয়া বলেন এ্যাহন আর ট্রলারে নৌকায় আমতলীতে যাইতে পারিনা কচুরিপনার কারনে। রামনা বাঁধ নদীর মুখে সুবন্ধী পয়েন্ট, টিয়াখালী নদীর সঙ্গে জুলেখা পয়েন্ট, পায়রা নদীর সঙ্গে খুড়িয়াখেয়াঘাট ও নতুন বাজার বাঁধঘাট এপয়েন্টগুলোতে ¯øইসগেট ও কালভার্ট রয়েছে। এগুলোতে সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ না করায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে নদীটি ছেয়ে গেছে কচুরিপানায়। বর্ষায় দুই কূল প্লাবিত হয়। শুকনো মৌসুমে ভালোভাবে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এবং কচুরিপানায় ভরে থাকায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
বসবাসরতরা জানান, মশা আর মাছির কারনে নদীপাড়ে যারা বাসকরেন তাদেও প্রত্যেক পরিবারেই পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলার চন্দ্রা,পাতাকাটা, চালিতাবুনিয়া, কাউনিয়া,মহিষডাঙ্গা,নাচনাপাড়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, রাওঘা, হলদিয়া, পশ্চিমচিলা, ভায়লাবুনিয়া, ঘুঘুমারি, রামজি, চলাভাঙ্গা,কৃষ্ণনগর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, নদী তীরের মানুষ পানি ব্যবহার করতে পারছে না। একসময় নৌ-চলাচলের কারণে
সংযুক্ত হাটবাজারে কৃষি পণ্য বিক্রি করার সুযোগ ছিল। বর্তমানে কচুরিপানার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে।
আমতলী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় আশির দশকে সুবন্ধী পয়েন্টে বাঁধ কাটা থাকায় রামনা বাঁধ নদীর সঙ্গে সংযোগ সুবিধা ছিল। একারণে চাওড়া ইউনিয়নের মোক্তার হোসেন তালুকদার হাটসহ তিনটি ইউনিয়নের গ্রামীন হাটগুলো জমে উঠেছিল এত ব্যাপক সুবিদা পেয়েছিল গ্রামীন অঞ্চলে বসবাসরত সাধারন মানুষ।
নব্বইয়ের দশকে বাঁধটি পুনরায় দেওয়া হয়। ২-১ বছর পর স্থানীয় জনগণ আবার বাঁধটি কেটে দেয়। এভাবে ১৮ বছর খোলা থাকার পর বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে বাঁধটি আবার দেওয়া হয়েছে।
চালিতাবুনিয়া গ্রামের হাফিজ মিয়া জানান, মোরা বাঁধ কাটা বা না কাটা বুঝি না, চাই পানি ও কচুরীপানা সরানোর স্থায়ী ব্যবস্থা।’ মউডাঙ্গা গ্রামের মো. ইব্রাহিম জানান, কচুরীপানায় আমরা শেষ। পানি ব্যবহারকরতে পারিনা। আমতলী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ সাইদ খোকন জানান, একটি বাঁধের কারণে লক্ষাধিক মানুষ পথে বসেছেন, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা। এছাড়া আমতলীর ঐতিহ্যবাহী তালুকদার বাজারসহ তিনটি ইউনিয়নের গ্রামীন বাজারগুলো আজ ধ্বংসের মুখে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসক ডাঃচিন্ময় কুমার বলেন,মশা আর মাছিতে ডেঙ্গু , কলেরা আমাঁশাসহ পানিবাহিত রোগ ছড়িযে পড়তে পারে। জরুরীভাবে কচুরীপানা পরিস্কার করা প্রয়োজন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ আশরাফুল আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে প্রয়োজণীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন কচুরীপনা স্থায়ী ভাবে অপসারনের জন্য এই খালের তিরবর্তী হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদও, কুকুয়ার শাখা খালগুলোতে । খনন, কালভার্ট ¯øুইজগেট নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। এই কাজগুলো শেষ হলেই কচুরী পানা অপসারন করা হবে।
এই কাজগুলো শেষ না করে কচুরীপানা অপসারন করা হলে কিছু দিনের মধ্যে পুনরায় ভরে যাবে কচুরীপানায় । তাই চলমানকাজগুলো শেষ হওয়া মাত্রই কচুরীপানা স্থায়ী ভাবে অপসারন করা হবে। নদীর দুপাড়ের হাজার হাজার মানুষ দ্রæতগতিতে কচুরীপানা অপসারনের জন্য প্রশাসনের উচ্চমহলের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :