নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন। একই স্থানে মসজিদ-মন্দির, নির্বিঘ্নে চলছে নামাজ-পূজা ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল নিদর্শন রয়েছে চিত্রার নদীর পাড়ে নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এলাকায়। প্রায় চার দশক ধরে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছে। ঐহিত্য মেনে সেই উৎসবে সামিলও হচ্ছেন সবাই।
ছোট্ট একটি মাঠের একপাশে মসজিদ আর অন্যপাশে মন্দির। সময় হলে কেউ যাচ্ছেন নামাজে, আর কেউ যাচ্ছেন দেবী দর্শনে। স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করছেন সবাই চলছেন সম্প্রীতি রক্ষা করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময় নড়াইলের পুরান সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়টি মহিষখোলায় ছিল। সেই কার্যালয়ের পাশেই ১৯৮৫ সালে মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ নামের এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯২ সালে নতুন করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর মসজিদ নির্মাণের কয়েক মাস পরেই প্রতিষ্ঠা করা হয় মহিষখোলা সার্বজনীয় পূজা মন্দির।
সরেজমিন (১১ অক্টোবর) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, চিত্র নদীর পাড়ে একটি ছোট্ট মাঠে মধ্যে তিনটি স্থাপনা রয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশে মসজিদ, আর উত্তর পাশে রয়েছে মন্দিরটি। মন্দিরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী। আর মাঠের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি রাস্তা।
ওই এলাকার কয়েকজন স্থায়ী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আমরা হিন্দু-মুসলিম একই পরিবারের সদস্য হিসেবে এলাকায় বসবাস করে আসছি। আমাদের এলাকায় কখনও ধর্ম নিয়ে কোনো বিরোধে আমরা লিপ্ত হইনি। এই এলাকার মানুষ মনে প্রাণে অসাম্প্রদায়িক। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।
মন্দিরে পূজা দেখতে আসা লোহাগড়ার হৃদয় দাস বলেন, আমি আগেই এখানকার কথা শুনেছিলাম। একই জায়াগায় পাশাপাশি মন্দির ও মসজিদে যে যার ধর্ম পালন করে। এটা দেখে বেশ ভালো লাগল। সবাই এ রকম মিলেমিশে থাকলে তো ধর্ম নিয়ে কোনো ঝগড়াঝাটি আর থাকত না।
মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয় জামে মসজিদের ইমাম ইনামুল ইসলাম বলেন, আমরা মন্দির কমিটিকে আমাদের নামাজের সময়সূচি দিয়েছি। নামাজের সময় মন্দির কমিটি তাদের কাজক্রম সীমিত রাখেন। নামাজ শেষ হলে স্বাভাবিক নিয়মেই পূজা-অর্চনার কাজ চলে। এ নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়নি। আশা করছি ভবিষতেও হবে না। আমরা সবাই মিলেমিশে একসঙ্গেই বসবাস করছি।
মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভংকর সরকার ট্রুপাল বলেন, এই এলাকায় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি হলেও কখনোই আমাদের পূজা-অর্চনা করতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হই না। আমরা সবাই মিলেমিশে এখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :