নওগাঁর মান্দায় ভূয়া ছাত্র সহযোদ্ধা/ সমন্বয়ক পরিচয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি প্রদান করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে উপজেলার ২নং ভালাইন ইউনিয়নের জামদই মোড়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জামদই গতিউল্লাহ্ আলিম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ। এসময় বক্তব্য রাখেন, ভূক্তভোগী আবু সাইদ,আব্দুস সালাম,সিরাজুল ইসলাম,জালাল উদ্দিন এবং দুলাল হোসেন প্রমূখ।
এসময় বক্তারা বলেন, গত ২৫ আগষ্ট জামদই গতিউল্লাহ আলিম মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দূর্ণীতি, সেচ্ছাচারীতা ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ আয়- ব্যায়ের হিসাব-নিকাশ প্রদান এবং তার পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামধারী শিক্ষার্থীরা। এসময় আয়- ব্যায়ের হিসাব-নিকাশ সঠিক হিসাব দিতে না পাড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামদই গতিউল্লাহ্ আলিম মাদ্রাসা এলাকার প্রধান উপদেষ্টা ও সমন্বয়ক সদস্য পরিচয়দানকারী আল কাওসার আলম ও মাহবুব আলম, সমন্বয়ক সদস্য আতিকুর ইসলাম ও ওবায়দুল্লাহ, ছাত্র সমন্বয়ক সদস্য ওমর ফারুক এবং রানা আহমেদসহ আন্দোলনকারীরা অত্র মাদ্রাসার অধ্যক্ষের প্রতি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং বিগত সময়ে প্রায় ১৯ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ।
তাদের দাবি যে,সহকারি -সুপারিনটেনডেন্ট পদে ৮ লক্ষ,সহকারী শিক্ষক,ল্যাব সহকারী, অফিস সহায়ক পদে সাড়ে ৯ লক্ষ ও আয়া পদে দেড় লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ৫ টি পদে নিয়োগের টাকাগুলো কোন খাতে ব্যায় করা হয়েছে? এর সঠিক হিসাব দিতে হবে। আর তা না হলে পদত্যাগ করতে হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে জানান যে, অত্র প্রতিষ্ঠানে কোন নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়নি। নিয়োগ প্রদানের সময়ে কোন লেনদেন করা হয়নি। ৫ জনের মধ্যে ২ জন কোন ডোনেশন ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক সভাপতির এক ছেলেও রয়েছেন। আর তিনজন মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে যা ডোনেট করেছেন তা দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নিয়োগ বোর্ড গঠনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ম্যানেজ করার বিষয়গুলো অকপটে স্বীকার করেন সুপার।
অথচ, ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্তরা জানান যে, নিয়োগের সময় তাদের কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি মর্মে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্প গ্রহণ করেন সুপার। পদত্যাগের দাবিতে স্ট্যাম্পগুলো উদ্ধার করার পর সেগুলো কৌশলে আন্দলোনকারীরা হাতিয়ে নেয়। মাদ্রাসার এতগুলো জমি ও পুকুরের টাকাগুলো যায় কোথায়? এখন পর্যন্ত মাদ্রাসার দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি কেনো? শিক্ষার মান এতো খারাপ কেনো? তুলনামূলক শিক্ষার্থী নেই কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে সুপার বলেন বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক টাকা মাদ্রাসার একাউন্টে রয়েছে। এরই এক পর্যায়ে আন্দলোনকারীদের তোপের মুখে পড়ে তিনি একটি লিখিত কাগজে জানান যে,অত্র মাদ্রাসায় নিয়োগ প্রদানের জন্য কার কাছ থেকে কত টাকা গ্রহণ করেছেন। এসময় তিনি নিজের দায়বদ্ধতা এড়াতে অভিনব কায়দায় সাবেক সভাপতিকে দায়ী করেন।
এরপর আন্দলোনকারীরা নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি রুমে নিয়ে জেরা করতে থাকেন। কত টাকার বিনিময়ে তারা নিয়োগ পেয়েছেন? টাকাগুলো কাকে দিয়েছেন? এসময় তারা জানান যে,নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তারা কাউকে কোন টাকা দেন নাই। পরবর্তীতে অনেক চাপ সৃষ্টি করার পর তারা স্বীকার করে বলেন যে তাদের কাছ থেকে ফাঁকাস্ট্যাম্প নেয়া হয়েছে। তবে সেখানে কি লেখা আছে সেটি তাদের জানা নেই। স্ট্যামগুলো ফেরত চান তারা। এমতাবস্থায় তাদের বলা হয় যে,যদি আপনারা কোন টাকা ছাড়াই নিয়োগ পেয়ে থাকেন, তবে খুবই ভালো। আর যদি কোন টাকা-পয়সা দিয়ে থাকেন তাহলে কাকে কত টাকা দিয়েছেন সেটি বলতে হবে। আর তা না হলে মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে সবাইকে ৮ লক্ষ করে টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে না চাইলে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের পদে অন্যজনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
এসব কথা শোনার পর তো সবাই আতংকিত। তাদের অব্যাহত হুমকির কারণে তারা স্বীকার করেন যে, কে কাকে কত টাকা দিয়েছেন। দিনব্যাপী আন্দলোন করার পর তারা যে যার অবস্থানে ফিরে যান এবং নিয়োগ বাণিজ্যের টাকাগুলো তিন দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়ে রশিদ দেখানোর জন্য হুঁশিয়ারী প্রদান করেন। অথচ,তিন দিন পার না হতেই আবারো বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দলোনকারীরা।
বিষয়টি জানার পর সেনাবাহিনীর সদস্যারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি,সুপার ও কমিটির সদস্যসহ স্থানীয় এলাকার কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের আর্মির সাবেক অস্থায়ী ক্যাম্প মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে ডেকে পাঠান। এরপর তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে কিছু টাকা প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে জমা রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। যাতে করে আর কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে।
গত ২৭ আগষ্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরেও স্থানীয় প্রশাসনকে উপেক্ষা করে একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহ করে বিশেষ সুবিধা গ্রহণের জন্য পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে অত্র এলাকাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জামদই গতিউল্লাহ আলিম মাদরাসা এলাকার প্রধান উপদেষ্টা ও সমন্বয়ক সদস্য আল কাওসার আলম বলেন,মাদ্রাসাটিতে ব্যাপক অনিয়ম,দূর্ণীতি, সেচ্ছাচারীতা ও নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে। অথচ,দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করা হয়নি। আয়-ব্যায়ের সঠিক হিসাব দিতে না পারায় মাদ্রাসা সুপারসহ দূর্ণীতির সাথে জড়িতদের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। মূলতঃ এসব দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা।
সুপারিটেনডেট এ.জি.এম ইলিয়াস বলেন, মাদ্রাসার আয়-ব্যায়ের হিসাব চেয়ে পদত্যাগের দাবিতে তোপের মুখে ফেলে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে লিখিত নেয়া হয়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই।
মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্তা নেই। তিনি পেশায় একজন সরকারি কর্মচারী। সুপারের অনিয়ম-দূর্নীতি থেকে রেহাই পেতে এবং সামাজিকভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বেকায়দায় ফেলতে তার প্রতি মিথ্যাচার করা হয়েছে। এমনকি বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহ করার জন্য এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি ।
মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম সেখ বলেন,বিষয়টি জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :