দৈর্ঘ্য মাত্র এক কিলোমিটার হলেও শ্রীপুর পৌরসভার ২নং সিএন্ডবি বাজার থেকে আনসার রোড পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বছরের বেশির ভাগ সময় পয়োনিষ্কাশন আর বৃষ্টির পানি সড়কটিতে জমে থাকে। সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। গাড়ি চলে হেলেদুলে। কিছু স্থানে গাড়ি থেকে নেমে ওই অংশ পার হতে হয় যাত্রীদের। এক কিলোমিটার অংশে এমনই বেহাল অবস্থা। এ নিয়ে চলাচলকারীদের আর অভিযোগ নয়, দানা বাঁধছে ক্ষোভের। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটের সলিং কমোফারা সড়কের অধিকাংশ স্থানে ইটের কোন অস্তিত্ব নেই। নির্মাণের পর প্রায় একযুগ যাবত সড়কটি বেহাল। চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় সরেজমিন ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, এক কিলো মিটার সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে পানি ও কাদায় একাকার হয়ে আছে। এ অবস্থায় অটো চালকেরা ১০ টাকার ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। এতে আপত্তি তুলে অনেকে হেঁটেই যাচ্ছেন পোশাক কারখানা, স্কুল ও কলেজে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বেড়াইদেরচালা, চন্নাপাড়া, দোখলা, বহেরারচালা, কড়ইতলা, বেলতলী, পিরুজালী, ইন্দ্রবপুর, মাঝিঘাটা ও বারতোপা গ্রামের লোকজন নিয়মিত চলাচল করে। তাছাড়া শিল্প অধ্যুষিত পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধ শতাধিক শিল্প কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একাধিক কিন্ডার গার্টেন, ধনাই বেপারী উচ্চ বিদ্যালয়, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়েই চলাচল করে থাকে। স্থানীয়দেরও চলাচলের একমাত্র পথ এটি।
আবার সড়কের গর্তে আটকে অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার ভয়েও অনেকে হেঁটে যাচ্ছেন। বেশি দুর্ভোগে পড়তে দেখা গেছে পোশাক শ্রমিক ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ সাগর বলেন, প্রায় এক যুগ আগে সড়কটিতে ইটের সলিং করা হয়েছিল। পরে ভাড়ী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ইট মাটিতে দেবে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে সড়কটি নির্মাণ করায় প্রায় এক যুগ এ ভোগান্তি চলছে বলেও জানান তিনি। বিশেষ করে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সড়কে দুর্বোগ বাড়ে কয়েক গুণ। হাজার হাজার শ্রমিক একসঙ্গে সড়কে বের হওয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মোস্তফা কামাল প্রধান বলেন, সড়কটি নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। যত ভোগান্তি চলাচলকারীদের। সড়ক সংস্কারে এখন আন্দোলনে নামতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
স্থানীয় প্রাইম স্টার একাডেমীর অধ্যক্ষ মাহতাব উদ্দিন জানান, এ সড়ক দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসা যাওয়ার সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেকে কাদা পানিতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে বই খাতা ও গায়ের জামা কাপড় ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। সড়কটিতে পানি জমে থাকলেও বের হওয়ার পথ নেই। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কলেজের শিক্ষার্থী আফরোজা বলেন, কলেজে যাওয়ার জন্য এ সড়কই একমাত্র মাধ্যম। ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে অটোরিকশায় ক ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিতে হয়।
অটো রিকশাচালক আব্দুল জব্বার বলেন, একটু পানি জমে থাকলে ভাঙ্গাচোড়া থাকায় সড়ক দিয়ে গাড়ী চালানো যায় না। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই-তিনটি অটো উল্টে পাতি ভেঙ্গে যায়। এক সেট পাতির দাম ১৫০০ টাকা। আর ভাড়া জনপ্রতি মাত্র ১০ টাকা।
অপর অটো চালক মাসুদ বলেন, পানির ভেতর ১০ টাকা ভাড়া বেশি চাইলে যাত্রীর সঙ্গে মারামারি লাগে। দিনে ১৫০০ টাকা আয় করলে গাড়ি মেরামত করতে ১ হাজার টাকা খরচ হয়। অনেক সময় গাড়ি উল্টে যাত্রীর হাত-পা ভেঙে যায়।
মেঘনা প্যাকেজিং কারখানার সুপারভাইজার নাঈম এবং এস কে সোয়েটার (পোশাক কারখানার) নারী শ্রমিক মারুফা আক্তার জানান, প্রতিদিন কাঁদা পানি পার হয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়। সড়ক খারাপ থাকায় নির্দারীত সময়ের ১০ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হতে হয়।
শ্রীপুর পৌরসভার সচিব রফিকুল হাসান বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পৌর প্রশাসক বরাবর একটি দরখাস্ত দিলে আগামী মিটিংয়ের মাধ্যমে সড়কটি সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :