গাজীপুরের শ্রীপুরে অটোরিক্সা চুরির অপবাদে দুই শ্রমিককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরের পর ক্ষতস্থান, চোখ, মুখে ও শরীরে লবণ এবং মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে অটোরিক্সা চালক দম্পত্তির বিরুদ্ধে। নির্যাতিত শ্রমিকেরা স্থানীয় সাইটালিয়া বাজার এলাকার ইরেক্টস্ পুলস এন্ড স্টাকচারস্ লিমিটেড কারখানায় চাকরি করে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর আগে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার শ্রমিক আলমগীর হোসেন (২৪) শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামের আছিম উদ্দিনের ছেলে। সে তার মামার বাড়িতে থেকে স্থানীয় সাইটালিয়া বাজার এলাকার এটি কারখানায় চাকরি করেন। অপর যুবক মাইনুদ্দিন সোহেল (২৬) ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ভাতাদিয়া গ্রাামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
অভিযুক্তরা হলেন আবদার গ্রামের ইউছুফ আলীর ছেলে ফাইজ উদ্দিন, তার স্ত্রী লিমা আক্তার, তাদের দুই মেয়ে টুম্পা (২২) এবং প্রমি (১৭)।
নির্যাতনের শিকার দুই শ্রমিকের স্বজনেরা জানান, শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুর্বৃত্তরা ফাইজ উদ্দিনের অটোরিক্সা চালককে নেশা জাতীয় খাবার খাইয়ে তার কাছ থেকে অটোরিক্সা ছিনিয়ে নেয়। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) নাইট ডিউটি শেষে সকাল ৬ টায় কারখানা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই ফাইজ উদ্দিন ও তার সহযোগীরা তাদেরকে আটক করে। প্রথমে তাদেরকে বেঁধে একটি অটোরিক্সা উঠিয়ে পাশের কাওরাইদ ইউনিয়নের বলদী ঘাট এলাকায় নিয়ে যায়। ওই এলাকার স্থানীয় লোকজনকে বলে অটোরিক্সা চোর ধরছি এবং একটি জঙ্গলে বেঁধে তাদেরকে দুই ঘন্টা নির্যাতন করে। বলদীঘাট এলাকা থেকে আবার ফাইজ উদ্দিনের বাড়ীর কাছে এনে তাদেরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রড, রোল, বাঁশ, কাঠ দিয়ে পিটিয়ে ক্ষতস্থানে লবণ এবং মরিচের গুড়া লাগিয়ে দেয়। এদিন বেলা ৩টা পর্যন্ত থেমে থেমে তাদেরকে নির্যাতন করে ফাইজ উদ্দিন, তার স্ত্রী লিমা আক্তার, তাদের দুই মেয়ে টুম্পা এবং প্রমি। পিটিয়ে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় এক পর্যায়ে ফাইজ উদ্দিনের স্ত্রী লিমা আক্তার সাদা কাগজে রাখা মরিচের গুঁড়া ও লবণ নিয়ে ওই দুই শ্রমিকের চোখে-মুখে ছিটিয়ে দিচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি জানান।
অটোরিক্সা মালিক অভিযুক্ত ফাইজ উদ্দিন বলেন, শুক্রবার কারখানা শ্রমিক আলমগীর ও সোহেল আমার অটোরিক্সা ভাড়া নিয়ে শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। পরে চালককে নেশা জাতীয় খাবার খাইয়ে তার কাছ থেকে অটোরিক্সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চালককে নিয়ে অটোরিক্সা খোঁজার সময় সে ওই দুই শ্রমিককে চিহ্নিত করে। পরে তাদের ধরে চুরির শাস্তি দেওয়া হয়।
ফাইজ উদ্দিনের স্ত্রী লিমা আক্তার বলেন, অটোরিক্সা চুরি করায় তাদেরকে পিটিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কেন পুলিশে দিলেন না? বর্তমান সময়ে চোরকে ধরলে গণপিটুনি দেয়। আমরা তো তাদেরকে মেরে ফেলি নাই। চুরির শাস্তি হিসেবে পিটিয়েছি।
নির্যাতনে শিকার শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, নাইট ডিউটি করে সকাল ৬টায় কারখানা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই সাথেই ফাইজ উদ্দিন ও তার সহযোগীরা আমাকে আটক করে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে হাত পা বেঁধে সারাদিন মারধর করেছে। আমি অটোরিক্সা চুরি করি নাই এবং এ বিষয়ে কিছুই জানি না বলার পরও তারা আমার কথা না শুনে নির্যাতন করেছে। ফাইজ উদ্দিনের ভয়ে নির্যাতনের শিকার দুই শ্রমিক থানায় এখনো অভিযোগ দেয়নি। থানায় অভিযোগ দিলেআবার যদি আমাদেরকে মারে তাই থানায় অভিযোগ দিতে ভয় পাচ্ছি।
নির্যাতনের শিকার অপর শ্রমিক মাইনুদ্দিন সোহেল বলেন, সন্দেহ করে আমাদেরকে গাছের সাথে বেঁধে এভাবে পিটিয়েছে। চুরির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। পিটানোর পর তারা আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকাও নিয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি। নির্যাতনের শিকার দুই শ্রমিকের সাথে কথা বলে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
আপনার মতামত লিখুন :