ইলিশের প্রজনন বাড়াতে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা সময় শেষ হবে আজ মধ্যেরাত থেকে। আশ্বিনের ভরা জোছনা থেকে গত ২২ দিন বরগুনা জেলায় সমুদ্র মোহনা ও নদ-নদীর ২০টি পয়েন্টের তিনশত ছিয়াত্তর কিলোমিটার জুড়ে অভয়াশ্রমে ইলিশ আহরণ, বিপণন, মজুদ, বহন ছিল আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সরকারের বিধি নিষেধ মান্য করে আমতলী তালতলীসহ বরগুনার প্রায় অর্ধ লাখ জেলে সাগর ও নদীতে মাছ ধরার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ছুটে চলছে ইলিশ আহরণে সাগর পানে, মাঝ নদীতে।
ইলিশের ভরা মৌসুমের দ্বিতীয় ধাপে মাছ ধরতে যাওয়ার পূর্ব মূহুর্তে জেলেরা ছিল মহাকর্ম যজ্ঞে ব্যস্ততার মধ্যে। জেলেদের একটা অংশ জাল বুনন করছে। কেউবা রশি ও অন্য সরঞ্জামাদি ঘুচিয়ে ট্রলারে ভরছে। কেউ বরফ ভরছে। মালিক পক্ষ সাগরে যাওয়ার জন্য রসদ কিনে দিচ্ছেন। মহাজনরা দিচ্ছেন আগাম টাকা। জেলে পাড়ায় কেউ দম ফেলার সময় টুকু পাচ্ছে না। রবিবার এমন দৃশ্য ছিল জেলে পল্লীতে।
পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটের সাইফ ফিশিং কোম্পানির মনিরুল হক মাসুম বলেন, আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে আল্লাহর রহমতে জালে মাছ ধরা পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন বাজারে চাল, ডাল, পিঁয়াজ, এলপিজি, গ্যাসের অতিরিক্ত মূল্যে জেলেদের রসদ ক্রয়ে আহরিত মাছের দামের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জেলার নিবন্ধনকৃত চার শত ট্রলার মাছ ধরাতে সাগরে গেছে। রোববার সকালে সাগরে চলে যাবে। তিনি বলেন, শত শত ট্রলার সাগরে নির্বিঘ্নে যেতে পারে সেজন্য সাগরে যেন সরকার টহল নিরাপত্তা আরও জোরদার রাখা উচিত।
বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশ রক্ষায় বরগুনা জেলা প্রশাসন ও মৎস বিভাগ অতীতের চেয়ে এবার ছিল সতর্ক অবস্থায়। ইলিশ প্রজনন বৃদ্ধি করতে ২২ দিনের অবরোধ চলাকালীন সময়ে আইন অমান্য করে মৎস শিকার ঠেকাতে তারা ৭৭টি মোবাইল কোর্ট ও ৩৬১টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এসময় তারা ৫০ জন জেলের থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা নগদ অর্থ জরিমানা আদায় ও তাদের বিরুদ্ধে ১৯ টি মামলা দায়ের করেছে।
এক লাখ চুয়ান্ন হাজার সাত শত ছেচলিশ টাকা মূল্যের তিন হাজার আট শত আটান্ন মিটার জাল জব্দ করার পাশাপাশি এক দশমিক আট মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করেছে। এসময় জেলার ৪৭ হাজার চার শত চল্লিশ জন নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে মানবিক কর্মসূচীর আওতায় ৩৬ হাজার ১০ জন জেলের জন্য বরাদ্দকৃত ৯০০.২৫০ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়।
বরগুনা জেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ মহসিন বলেন, এবছর মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পূর্ব থেকে জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে সভা করা হয়েছে। ফলে এবারের এই নিষেধাজ্ঞার সময় অতীতের তুলনায় সাগর মোহনা ও নদ নদীতে অভিযান চলাকালীন সময়ে জেলেদের দেখা মিলে নি। এছাড়াও এবার আমরা কৌশলগত ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনা করে সেখানে আমাদের নিয়মিতভাবে লোকজন অবস্থান রেখেছিলাম। তিনি আরও বলেন, গত ১ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা বন্ধে বরগুনা জেলা মৎস বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি মাপের ছোট ইলিশ ঝাটকা ধরা, ক্রয় বিক্রয়, পরিবহন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, বেহুন্দী জাল, চড়গড়া জাল, খুটা জাল, কারেন্ট জাল ব্যবহারকারী ও বিক্রেতাদের মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ অনুযায়ী মামলা দায়ের, জেল, জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা হবে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, পুলিশ এবং মৎস বিভাগ যৌথভাবে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞায় একসঙ্গে কাজ করছে। অন্তত বরগুনা জেলায় কোন ভাবে যেন ইলিশ মাছ ধরা না হয় বাজারজাত না হয় সেজন্য আমরা কাজ করেছি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :