মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে জাতীয় মাছ ইলিশ। ইলিশের ভরা মৌসুমেও দামের কারণে রুপালি ইলিশের ধারে কাছেও ভিড়তে পারছেন না মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। এ অবস্থায় একজন দিনমজুরের সারাদিনের রোজগারেও মিলছেনা ১ কেজি ইলিশ। নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে ইলিশ মাছ যেন এক সোনার হরিণ।
ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলছে, নদীতে ইলিশ কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি। অথচ এক সময় এই ভরা মৌসুমে ইলিশ বাঙালি ধনী-গরিব সবার পাতেই থাকতো। কিন্তু সেই ইলিশ মাছ এখন শুধু বড়লোকদের তরকারিতে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) উপজেলার পদ্মা নদীর বাহাদুরপুর ঘাটে ইলিশ মেলায় গিয়ে দেখা যায়, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৮ শ থেকে ২ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনেরগুলো ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামেরগুলো ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা আর ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামেরগুলো ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশ কিনতে আসা সেলিম নামের এক দিনমজুর জানান, প্রতিদিন কাজ করে ৫০০-৬০০ টাকা রোজগার করতে পারি। বাড়িতে ছেলে-মেয়ে ইলিশ মাছ খাইতে চায়ছে। কিন্তু ইলিশের দাম অনেক বেশি। সারাদিনের কামাই দিয়েও ১ কেজি ইলিশ পাওয়া সম্ভব না।
ইলিশ কিনতে আসা মোবারক নামের একজন জানান, এই মৌসুমে আমাদের এলকার প্রতিটি পরিবারে ইলিশ খাওয়ার ঐতিহ্য ছিলো। কিন্তু ইলিশের দাম এতো চড়া যে এখন আমাদের মতো পরিবারে সেই ঐতিহ্য আর নেই। ইলিশ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাজেটের বাইরে। উচ্চবিত্তের মানুষ ছাড়া এখন আর ইলিশ মাছ কেনা সম্ভব নয়।
এ ঘাটে ইলিশ কিনতে মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ভাবছি ইলিশ কিনব। কিন্তু দাম তো কমছেই না। আমরাদের এখন বাজারের অন্য জিনিসপত্র কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় এতো দাম দিয়ে ইলিশ কেনা কষ্টের ব্যাপার।
উপজেলার বাহাদুরপুর ঘাটের কয়েকজন জেলে জানান, গত ২২ দিন বেকার ছিলেন তারা। তাদের আয়-উপার্জন বন্ধ ছিল। এ বছর মৌসুমের প্রথম থেকেই ভালো মাছ পাওয়া যায়নি। অনেক জেলে এখনো আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। নদীতেও তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা।
রতন নামের এক ইলিশ বিক্রেতা বলেন, যে অল্প কিছু খদ্দের আসছেন, সেগুলোর অন্তত ৯৫ ভাগই উচ্চবিত্ত শ্রেণির। বাকি মধ্যবিত্ত শ্রেণির যারা আসছেন, তারা ছোট সাইজের ইলিশগুলো কিনছেন বা দাম জেনে চলে যাচ্ছেন। নদীতে ইলিশ না থাকায় গত দুই তিন বছরের মতো এবারও দাম শুরু থেকেই চড়া।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :