AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভয়াল সিডরের স্মৃতি মনে পড়লে আজো আঁতকে ওঠেন উপকূলীয় মানুষ


Ekushey Sangbad
আবু সাইদ খোকন, আমতলী, বরগুনা
১১:৪৫ এএম, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
ভয়াল সিডরের স্মৃতি মনে পড়লে আজো আঁতকে ওঠেন উপকূলীয় মানুষ

১৫ নভেম্বর ভয়াল সিডরের দিন । ২০০৭ সালের ওই দিন রাতে ঘন্টায় ২১৫ কিলোমিটার গতির সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে সমূদ্র উপকূলীয় বরগুনার আমতলী তালতলীসহ সমগ্র উপকূলীয় এলাকায়। ভয়াল ওই ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে পড়লে আজো আঁতকে ওঠেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে লন্ড-ভন্ড করে দিয়েছিল আমতলী-তালতলীসহ গোটা দক্ষিণের জনপদ। ওই ঘূর্ণিঝড়ে আমতলী ও তালতলীতে মারা গিয়েছিল ২৭ জন মানুষ। মৃত্যু হয়েছে অগনিত গবাদি পশুর। বাড়িঘর, ফসলী জমি, রাস্তঘাট,
ভেরীবাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়। 

স্থানীয় মানুষের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে সেই দিনের ঘটনা। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপকূল ঝুড়ে তীব্র দমকা হাওয়ার সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে। চারিদিকে হ্যান্ড মাইকে রেডক্রিসেন্ট এর সেচ্ছাসেবকরা সকলকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বারংবার অনুরোধ করছেন। এরই মধ্যে আবহাওয়া বিভাগের পক্ষ থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনেও বেশির ভাগ মানুষই আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে রয়ে যান বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল, তারিখের বন্যা হয় না এবং তাদের কিছুই হবে না। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিডর আঘাত হানল আমতলী-তালতলীসহ সমগ্র উপক‚লীয় এলাকায়। প্রবল ঝড় ও মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ¡াসে ২০ উচ্চতায় পানি উপকূলের কয়েক হাজার মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে যেখানেই চোঁখ যায় সব লন্ডভন্ড। লাশের পর লাশ। চারদিকে শুধুই ধ্বংসলীলা।

জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন দপ্তর জানায়, সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে জেলায় প্রাণ হারান ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ। নিখোঁজ হন ১৫৬ জন, ৩০ হাজার ৪৯৯টি গবাদি পশু ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯টি হাঁস-মুরগি মারা যায়। ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সম্পূর্ণ গৃহহীন হয়ে পড়ে ৭৭ হাজার ৭৫৪টি পরিবার।

ভয়াল সিডরের স্মৃতিতে এখনো শিউরে ওঠেন উপকূলের মানুষ। মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন তারা। সিডরে বরগুনা জেলার সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা হচ্ছে তালতলী, আমতলী, বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা। ঘূর্ণিঝড়ের
পরের দিনই ওই উপজেলায় বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ ও শিশুসহ সহা¯্রাধিক মানুষের মরদেহ পাওয়া যায়। নিখোঁজ হন শত-শত মানুষ।

ঘূর্ণিঝড় সিডরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমতলীর লোচা গ্রামের হামেদা বেগম জানান, ঘুর্নিঝড় শুরু হলে দু’পুত্র ও শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তার ৪ বছরের শিশু কন্যা বিউটিকে জলোচ্ছাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। একইভাবে আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের আবুল কালাম তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাইক্লোন সেল্টারে যাওয়ার পথে তার স্ত্রীকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

এদিকে আমতলীর ঘটখালী ও বৈঠাকাটা গ্রামের ১৪জন দিন মজুর পানের বরজের ধানশি লতা সংগ্রহের জন্য ট্রলার নিয়ে সাগর ও পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর মোহনা টেংরাগিরি বনের কাছে অবস্থান করে। সিডরের ভয়াল রাতের জলোচ্ছ¡াসে তাদের
ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

ঘূর্ণিঝড় সিডরের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে তালতলীর জয়ালভাঙ্গা এলাকার বৃদ্ধ জেলে মকবুল হোসেন বলেন, সিডরের আজ ১৬ বছর পূর্ণ হলেও উপকূলবাসীর মাঝে এখনোা ফিরে আসেনি সচেতনতা। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধগুলো সংস্কার করা হলেও তা
টেকশই হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিডরে বরগুনা জেলায় ৮৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। বর্তমানে ভেঙ্গ যাওয়া সেই ভেড়িবাধগুলো সংস্কার মেরামত করা হয়েছে। চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আখতারুজ্জামান বাদল খান বলেন, এলাকার মানুষ এখনো দূর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় বেড়িবাঁধগুলো টেকশই হওয়া দরকার।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব মুঠোফোনে জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডরের পরে ভেঙে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত বন্য নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধগুলো নির্মাণ ও মেরামত করা হলেও প্রতি বছর ঝড় জলোচ্ছ¡াসে তা ভেঙে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। 

একুশে সংবাদ/ এস কে

Link copied!