গাজীপুরের শ্রীপুরে এইচ ডি এফ এ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখে শ্রমিকেরা জৈনাবাজার-কাওরাইদ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। এসময় সড়কে ছোটবড় যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রীদের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে শিল্প ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বেতনের আশ^াস দিলে তারা সাড়ে ১০টার দিকে চলে যায়।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের জৈনা বাজার কলেজ রোড এলাকায় এইচ ডি এফ এ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানার সামনে শ্রমিকেরা সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
কারখানার ফিনিশিং সেকশনের অপারেটর তাসলিমা বেগম, জোৎ¯œা আক্তার,রোজিনা বেগম, নিটিং সেকশনের কোকিলা, নাসরিন আক্তার এবং সুইং সেকশনের সানোয়ার হোসেন জানান, আমরা প্রায় ৪’শ শ্রমিক এ কারখানায় কাজ করি। সকালে আমরা কাজ করতে এসে দেখি গেইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কোন পূর্ব নোটিশ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ অক্টোবর এবং চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষনা করেছে। আমাদের ন্যায্য পাওনা নাইট বিল, টিফিন বিল, ইনসেনটিভ বোনাস, উৎপাদন বোনাসসহ কোন সুযোগ সুবিধা কারখানা থেকে দেওয়া হয়না। বর্তমান সময়ে আশেপাশের কারখানাগুলোতে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা হাজিরা বোনস দিচ্ছে। আমাদের কারখানায় মাত্র ৫০০ টাকা হাজিরা বোনাস দেয়। প্রতি মাসে সপ্তম কর্ম দিবসে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গত তিন বছর যাবত ১৫ তারিখের পর বেতন দেয়। আমাদের দোকান বাকি, বাড়ী ভাড়া বাকি, ছেলেমেয়েদেওে স্কুল কলেজের বার্ষিক পরীক্ষার বেতন দিতে হবে। দেড় মাসের বেতন না দিয়ে কারখানা হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষনা করায় আমরা দোকানের বাকি এবং বাসা ভাড়া দিতে পারছি না।
এইচ ডি এফ এ্যাপারেলস লিমিটেডের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক (এডমিন ম্যানেজার) সিপু চৌধুরী জানান, শ্রমিকদের এক মাসের বেতন বকেয়া আছে। প্রায় চার মাস যাবত কারখানায় কোন অর্ডার নেই। আমরা সাব কন্টাকের অর্ডার এনে কাজ করাচ্ছলাম। শ্রমিকদের বলছি আগামী ১৮-২০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষের বৈধ নির্দেশ অমান্য করে অযৈাক্তিক দাবি তুলে কারখানার সকল প্রকার কাজ বন্ধ করে। তাদেরকে কাজে যোগ দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করলেও তারা নিজ নিজ কাজ বন্ধ রাখে এবং উশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি করে। যা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ মোতাবেক অবৈধ ধর্মঘটের শামিল। অলস সময় বসে থেকে শ্রমিকেরা কারখানার জেনারেটর বিল, বিদ্যুৎ বিল এবং ডিজেল খরচ হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে হেড অফিস থেকে কর্মকর্তারা এসে বুধবার রাতে সাব কন্টাক্টের মালগুলো ফেরত দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেয়।
বতর্মানে উদদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক ও প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তায় বাধা হওয়ায় বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৪ই নভেম্বর) থেকে কারখানা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়। পরবর্তী কাজের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ জানান, অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন আগামী ২৫ নভেম্বর পরিশোধ করার প্রতিশ্রতি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। নভেম্বর মাসের ১৫ দিনের বেতন কবে পেিরশাধ করবে ওইদিন শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :