বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় নির্মাণাধীন আমতলী উপজেলায় ৫টি সেতুর কাজ ৫ বছর ধরে স্থবির হয়ে
পড়েছে। যার নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। কোথাও কোথাও আংশিক কাজ করে লাপাত্তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং খামখেয়ালীপনা সহ নানা কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি। ফলে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। আর এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে বরগুনার বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় নির্মাণ শুরু হওয়া ৫টি সেতুর কাজ স্থবির হয়ে আছে। এসব সেতুগুলো কাজ শুরুর পর থেকে এক বছরের মধ্যে হস্তান্তরের নিয়ম থাকলেও ৫ বছরেও তা হস্তান্তর হয়নি। কবে নাগাদ এসব কাজ শেষ হবে তারও কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ফলে স্থানীয়দের চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগ। নির্মাণাধীন ৫টি সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়ি খালের সোনাখালী এলাকায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার সেতুর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারী। যা কাজ শেষে নিয়মানুযায়ী হস্তান্তর করার কথা ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারীর মধ্যে। এরপর কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও তা শেষ হয় গত (২০২৩) বছরের ১৩ নভেম্বর। কিন্তু কাজ তো শেষ হয়নি, র্দীর্ঘ্যদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সেতু নির্মাণের কাজ। সংশ্লিষ্ট এলজিইডি কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী এ পর্যন্ত সেতুর কাজ সমাপ্ত হয়েছে ৭০ ভাগ। যার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস। এ সেতুটির কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে স্কুল-মাদ্রাসাসহ স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে উপজেলার পূর্ব সোনাখালী গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করেন, আবার কাজ বন্ধ রাখেন। দীর্ঘ্যদিন ধরে সেতুর কাজ বন্ধ আছে। ঠিকাদার তাদের ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছেন। আর সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর ভোগান্তিতে আছে। এমনকি সেতু সংলগ্ন দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পাড়াপাড় হয়ে যেতে হয়। কিন্তু ঠিকাদারের এ বিষয়ে কোন মাথাব্যাথা নাই। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ বাস্তবায়ন চাই।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মঠবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বললেও এরপর আর ফোন রিসিভ করেননি।
একই অবস্থা জেলার আমতলী-তালতলী সড়কের আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার সংলগ্ন খালে পৌনে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৬০ মিটার গার্ডার ব্রীজের কাজ। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ ভাগ। এমনকি এরপর কাজের মেয়াদও বাড়ায়নি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ এই সড়কটি জেলা শহর সহ আমতলী-তালতলী দুই উপজেলার একমাত্র সংযোগ সড়ক। তাছাড়া প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পরিবহন বাস গাড়িসহ অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে থাকে।
আড়পাঙ্গাশিয়া এলাকার গাড়ি চালক মো: জাবের মিয়া বলেন, এ রাস্তা দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত ইট সহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের জন্য আমতলী শহরে যাই। কিন্তু ব্রীজটি না হওয়ায় পাশের একটি পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজ পাড় হয়ে যেতে হয়। তবে যেকোন সময় পুরানো ব্রীজটি ভেঙ্গে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও বরগুনা জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: ছগির হোসেন বলেন, একটি বৈদ্যুতিক খাম্বার কারনে কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। তবে বর্তমানের কাজ চলমান আছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মো: ছগির হোসেন বলেন, ৯০ ভাগ শেষ হওয়া ব্রীজের সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সেগুলো অনুমোদন হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়ি খালে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭ মিটার গার্ডার ব্রীজের কাজ শুরুহয়েছে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই। যা শেষ হওয়ার কথা ছিলো
২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর। কিন্তু কাজ শেষের মেয়াদের চার বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৬৫ ভাগ। এ কাজের ঠিকাদার হলেন, হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম মৃধা। এভাবে কাজ স্থবির হয়ে আছে উপজেলার ৫টি সেতুর। ফলে স্কুল-মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী সহ ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সেতুর কাজ বাস্তবায়নের দাবি স্থানীয়দের।
বরগুনা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মেহেদী হাসান খান বলেন, সকল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যেই ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়ে চুড়ান্ত নোটিশ করেছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় চুক্তি বাতিল সহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস একর্মকর্তার।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :