AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
‘ঝুড়ির গ্রাম’

ফরিদপুরে দেড়শো পরিবার বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে


ফরিদপুরে দেড়শো পরিবার বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে

শত বছরের বেশি সময় ধরে ফরিদপুরের চাঁদপুর পূর্ব মল্লিকপাড়া গ্রামের প্রায় দেড়শো পরিবার বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করে জীবন—জীবিকা নির্বাহ করছে। যে গ্রামটি ফদিরপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর সংলগ্ন ‘ঝুঁড়ির গ্রাম’ মল্লিকপাড়া নামে পরিচিত। এখানের বসবাসরত বাসিন্দারা ছোটখাটো ক্ষেত খামারের সাথে জড়িত থাকলেও সারা বছর বেশির ভাগ সময় ঝুড়ি তৈরি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা। তাদের রোজগারের প্রধান পেশা ঝঁুড়ি বুনানো। সকাল থেকে রাত অবধি নারী—পুরুষের সাথে তাদের ছেলে—মেয়েদেরকেও ঝঁুড়ি তৈরির কাজ করতে দেখা গেছে। 

সরেজমিনে জানা যায়, ফরিদপুর—রাজবাড়ী মহাসড়কের ধুলদি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাইপাস সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার পরে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম নিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। ওই ওয়ার্ডের চাঁদপুর পূর্ব মল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দারাই শুধু ঝঁুড়ি বুনানোর কাজ করেন। ঈশান গোপালপুর বাজার পার হয়ে আজিজ মাস্টারের বাড়ি হতে বটতলা রমজানের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় পূর্ব মল্লিকপাড়া গ্রামে প্রায় দুইশো পরিবারের বসবাস। তাদের মধ্যে ঝুড়ি বানানোর কাজ করেন দেড়শোর পরিবার। যুগের পর যুগ ধরে তারা ঝঁুড়ি তৈরির কাজ করে সংসার চালান। 

গতকাল বুধবার মল্লিকপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে, উঠানে, বারান্দায়, দোকানের সামনে বসে ঝুড়ি তৈরি করছেন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা—বৃদ্ধরা। এসব বাড়িতে বউ হয়ে আসা নারীরাও শিখে নিয়েছেন ঝঁুড়ি বুনানোর কাজ। বাবার বাড়িতে ঝঁুড়ি তৈরির কাজ না থাকলেও গ্রামের পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে ঝঁুড়ি তৈরির কাজ করছেন তারা। এদিকে আবার গ্রামের রাস্তায় বিক্রির জন্য ভ্যানে করে তল্লা বাঁশ নিয়ে এসেছেন বাঁশ ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে ঝুড়ি কিনতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার মাদারীপুরের টেকেরহাটসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মল্লিকপাড়া গ্রামে ঝুড়ি কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা। 

স্থানীয় বাসিন্দা বাবর আলী মল্লিক বলেন, বাপ—দাদার আমল থেকেই তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে এই ঝুড়ি তৈরির কাজ শিখেছিলেন। এই ঝুড়ি তৈরি করেই সংসার চলে তাঁর। তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে প্রতি সপ্তাহে ছোট—বড় মিলে ৫০ থেকে ৬০টি ঝুড়ি তৈরি করতে পারেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে তাঁদের আয় হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে বাঁশের দাম বেশি হওয়ায় খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে ঝঁুড়ি তৈরিতে। সেই তুলোনায় ঝঁুড়ির দাম কম। ‘তল্লা বাঁশ’ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি হয়। প্রতিটি বাঁশ ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনতে হয়। একটি বাঁশ থেকে প্রায় চারটি ঝুড়ি তৈরি করা যায়। 

ছিদ্দিক মল্লিক (৬০) নামে এক বাসিন্দা বলেন, আমি ৫০ বছর ধরে ঝুঁড়ি তৈরির কাজ করি। আমাদের প্রধান পেশা ঝুড়ি বানানো। ছেলে—মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছে সংসার। দিনের বেলা বাঁশ থেকে চটা তৈরি করি। রাতের মধ্যে আবার চটা দিয়ে ঝুড়ি বানানো হয়। রাতদিন মিলে সপ্তাহে প্রায় একশো ঝুড়ি বিক্রি করি। ছেলে—মেয়েরা লেখাপড়া করলেও তারা স্কুল—কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে ঝুড়ি তৈরির কাজে লেগে যায়। 

নাছিমা বেগম (৫২) নামে এক গৃহবধু বলেন, আমাদের এখানে চার প্রকারের ঝঁুড়ি তৈরি হয়। এ পেশাকে আমরা ক্ষুদ্র কটির শিল্প হিসেবে বেছে নিয়েছি। নারী হিসেবে আমি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা মনে করি। আমি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আমাদের ঝুড়ি নিয়ে কথা বলেছি। সারা বছর ধরে এই কাজ চললেও বছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাঁশের ঝুড়ির চাহিদা থাকে বেশি। ওই সময় ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো ঝুড়ি সরবরাহ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, আমরা এনজিও থেকে চড়া সুদে লোন নিয়ে ঝুড়ি তৈরির কাজ করি। তবে এ পেশাকে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প হিসেবে কম সুদে সরকারি ঋণ দেওয়ার দাবি জানান এ গৃহবধু। একই গ্রামের বাসিন্দা ওবায়দুর মল্লিকও এ শিল্প দিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে সরকারিভাবে কম সুদে লোন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। 

তিন সন্তানের জননী শাহেদা বেগম জানান, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে এসে বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরির কাজ শিখেছি। বাবার বাড়িতে কোনদিন এসব কাজ করিনি। এই গ্রামের প্রধান কাজ ঝড়ি বুনা। তাই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। বাড়ি থেকেই ব্যাপারীরা ঝুড়ি কিনে নিয়ে যায়, বাজারে যেতে হয় না। সারা বছর ধরে এই কাজ চললেও বছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাঁশের ঝুড়ির চাহিদা থাকে বেশি। ওই সময় ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো ঝুড়ি সরবরাহ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। আকারভেদে প্রতিটি ঝুড়ি ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

পূর্ব চাঁদপুর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী রাইশা জানায়, সে প্রতিদিন বাড়ির পাশের এক চাচীর ৫টি ঝুঁড়ি সুতা দিয়ে বেধে দেয়। তা থেকে সে ১৫ টাকা আয় করে। সেই টাকা দিয়ে স্কুলে গিয়ে সে খাবারতা কিনে খায়।  

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট এলাকার ব্যবসায়ী আতিয়ার খালাসী বলেন, প্রায় ১৮ বছর ধরে চাঁদপুর মল্লিকপাড়া গ্রাম থেকে ঝুড়ি কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছি। প্রতি সপ্তাহে এই গ্রাম থেকে এক হাজার থেকে দেড় হাজারর ঝুড়ি সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর এগুলো মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। প্রতিটি ঝুড়িতে সব খরচ বাদে তিনি ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ করেন। এখানকার ঝুড়ির মান ভালো। তাই বিভিন্ন জেলায় এর কদর বেশি। 

ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. কালাম শেখ বলেন, পূর্ব মল্লিকপাড়া গ্রামে বানানো বাঁশের ঝুড়ি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্য। তাদের কারণে গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। গ্রামটি ‘ঝুড়ির গ্রাম’ হিসেবে পূর্ব পরিচিত। তবে এ পেশায় কাজ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেছে। 

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!