বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের সাতলা সমন্বিত মৎস্য ঘেরের জমি মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে মানববন্ধন করেছেন ঘেরের মালিকেরা। সাতলা ইউনিয়নে অবস্থিত সাতলা সমন্বিত মৎস্য ঘেরের পাড়ে এই মানববন্ধন হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভূপ্রকৃতিগত কারনে উজিরপুরের সাতলা, জল্লা ও হারতা তিন ইউনিয়নের অধিকাংশ জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় একটি ফসল ফলে। বছরের বাকি সাত মাস জলাবদধ থাকায় এসব জমিতে জমি মালিকেরা মিলে মাছ চাষ করেন। পশ্চিম সাতলা এলাকার প্রায় দুই হাজার একর আয়তনের এমন ঘেরটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার একটি পক্ষে এবং অপরপক্ষে রয়েছেন বতর্মান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাদারন সম্পাদক শাহিন হাওলাদার।
আগে এই বিশাল ঘেরটি সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ২০২৩ সালে বর্তমান চেয়ারম্য শাহিন হাওলাদার ও তাঁর লোকজন ঘেরটি নিয়ন্ত্রণ নেন। এনিয়ে বিরোধ চলছে দুপক্ষে। সম্প্রতি ঘেরের দ্বন্দ্ব নিয়ে স্থানীয় ইদ্রিস হাওলাদার তাঁর চাচাতো ভাই সাগর হাওলাদার খুন হন।
এ ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারসহ ২৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়। এই মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বর্তমানে কারাগারে আছেন।
গত ১৫ নভেম্বর শাহিন হাওলাদারের লোকজন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এতে খুন হওয়া ইদ্রিস হাওলাদারের ছেলেকে প্রধান আসামি করা হয়। এই মামলার প্রতিবাদেই বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে ঘের মালিক সমিতির সভাপতি ফয়জুল হক বালি ফারাহীন বলেন, গত ২৪ আগস্ট মৎস্য ঘের সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাতলা বাজারের ব্যবসায়ী ও ঘের মালিক ইদ্রিস হাওলাদার ও তাঁর চাচাতো ভাই সাগর হাওলাদার।
এ মামলায় সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারসহ ২৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার জেল হাজতে রয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে ও ঘের দখল করে মাছ লুট করার অসৎ উদ্দেশে নিহত ইদ্রিস হাওলাদারের কলেজ পড়ুয়া ছেলে নায়েব হাওলাদারকে (১৯) প্রধান আসামি করে ১৫ জন জমির মালিকের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় ইদ্রিস ও সাগর হত্যা মামলার ২২ নম্বর আসামি মিজান মিয়ার ছোট বোন মমতাজ খানমকে বাদী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হত্যা মামলাকে ধামাচাপা দিতে এবং এই এলাকার ঘের দখল নেওয়ার জন্যেই হয়রানিমূলক এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা ইদ্রিস ও সাগর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই এবং মিথ্যা হত্যাচেষ্টা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১৫ নভেম্বর মিজানুর রহমানের ভাই মনিরুজ্জামান মিয়াকে ভিকটিম বানিয়ে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না করে আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরপর ওই ঘটনায় বরিশাল জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে
সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা এই মিথ্যা মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
আব্দুস সাত্তার মিয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাবেক ইউপি সদস্য মোনাফসের হাওলাদার, জাকির মিয়া, সালাম বিশ্বাস, বনি আমিন বালি, মোস্তফা মিয়া, মিলন বিশ্বাস, সেলিম মিয়া, আমজেদ মিয়া, ফরহাদ মিয়া,কামাল হোসেন, হান্নান হাওলাদার প্রমুখ।
অভিযোগের বিষয়ে মামলার বাদী মমতাজ বেগম মুক্তা জানান, তার ভাই মিজানুর রহমানকে মিথ্যা হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে এবং ১৫ নভেম্বর সকাল ১১ টায় তার ভাই মনিরুজ্জামান মিয়াকে প্রতিপক্ষরা মাথায় কুপিয়ে জখম করায় তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত মিজানুর রহমান মিয়া তিনি বলেন, ওই ঘেরে তিনি মাছ ছেড়েছেন কিন্তু তাঁকে ঘের দখল দিচ্ছে না এবং তাঁর ভাই ঘেরের মাছকে খাবার দিতে গেলে তিনি হামলা শিকার হন। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তাঁরা এনেছেন তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :