অগ্রহায়ণ মাস। হেমন্তের সোনালী সকালে এখন রোপা আমন ধানে বিস্তৃত ফসলের মাঠ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কৃষক ক্ষেত থেকে ক্ষেতেই মাড়াই করা হচ্ছে ধান। কৃষানী ও পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছে বাড়ির উঠানে আগত ধান শুকিয়ে গোলায় উঠাতে। ধানের উৎপাদন বেশী হলেও এখন কাঙ্খিত দাম নিয়ে আশংঙ্কা বিরাজ করছে কৃষকদের মধ্যে।
ফরিদপুরের সদরপুরে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকার পাশাপাশি মৌসুমে জমি তৈরী, ধানের চারা রোপন, সার প্রয়োগ, ও পরিচর্যার কারনে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলনে এ বছর কৃষকের ভাগ্য বদলে যাচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষকরা আশা প্রকাশ করেন। কিন্তু বাজারে অন্য জাতের ধান আসলে দাম নিয়ে সংকটে থাকবে তারা। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিঘা প্রতি ৪থেকে ৫মণ ধান বেশি ফলন রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬২৯৬ হেক্টর কিন্তু এ বছর ৬৩০০হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। উপজেলার ৭শ জন কৃষক কে প্রনোদনা হিসাবে কৃষি অফিস থেকে ১০কেজি করে ডিএপি,এমওপি সার ও ৫কেজি ধান বীজ পায়। এছাড়াও পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
স্থানীয় সাড়ে সাতরশি বাজারের খাদ্য শস্য ব্যবসায়ী মোঃ আলমগীর হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর বাজারে রোপা আমনের চিকন জাতের ধান সরকারি বাজার মূল্য ১২’শ টাকা ধরা হলেও ১২শ থেকে ১২৫০টাকা বিক্রি করেছে কৃষক। এ বছর নতুন ধান বাজারে উঠতেই বিক্রি হচ্ছে ১৩’শ থেকে ১৩শ ৫০টাকা মন।
ঢেউখালী ইউনিয়নের বাবুরচর কাচারী ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আঃ রব মাতুব্বর বলেন, এ বছর তার প্রায় ১০বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। সার ও কীটনাশক ও পরিচর্যার কারনে ফলন ভালো হয়েছে। বিগত বছরে চেয়ে এ বছর ৩ থেকে ৪মন ধান বিঘা প্রতি উৎপাদন বেশী। গত বছরের চেয়ে এবছর বিঘা প্রতি ৩ থেকে ৪মন ধান বেশী হয়েছে।কিন্তু এখন বাজারে যদি ধানের মূল্য নেমে যায় তাহলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
সদরপুর ইউনিয়নের ৯রশি গ্রামের কৃষক রাজা মিয়া জানান, ৪২শতাংশের এক বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষের জন্য বিভিন্ন ধরনের ১শ কেজি সার, কিটনাশক ৪কেজি বাবদ ৬হাজার ও ২০থেকে ২৫জন শ্রমিকের মূল্য ১০হাজার, ক্ষেতের পানি বাবদ-২হাজার। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে খরচ হয় ১৮হাজারটাকা। আর প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হয় ২০থেকে ২৫মন। সদরপুরে ব্রি-৮৭ জাতের ধান বেশী চাষাবাদ হয়ে থাকে।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, রোপা আমনের চারা গাছ লাগানোর পর থেকেই এক ধরনের পোকা আক্রমণ করে থাকে। সেই পোকার হাত থেকে চারা ধান রক্ষা করতে কৃষকদের জমির আগাছা ও স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও সরকারি ভাবে প্রনোদনা হিসাবে কৃষকদের সার ও বীজ দেওয়া হয়ে থাকে। এ বছর ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে উৎপাদন বেশী হয়েছে। এখন বাজার ভালো পেলে কৃষক উপকৃত হবেন।
ছবিঃ সদরপুরের ঢেউখালী ইউনিয়নে বাবুরচর কাচারী ডাঙ্গী গ্রামে রোপা আমন ধান কাটছে কৃষক।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :