সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে ফরিদপুরে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোট নির্ধারিত স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে এ প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সনাতনী প্রতিবাদ সভায় শিশু, নারী, পুরুষসহ শত শত বিক্ষোভকারী মিছিল অংশ নেয়। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময়ও পুলিশের একটি টিম শ্রীঅঙ্গনের সামনে দেখা গেছে।
দলে দলে সনাতনী জাগরণ জোটের সমর্থনে বিক্ষোকারীরা প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হতে শুরু করলে পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। এরপরও বিক্ষোভকারীরা বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রেসক্লাবের আশেপাশে জড়ো হতে থাকে।
সরেজমিন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে জড়ো হতে থাকে ইসকন সমর্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আগে থেকেই কোতয়ালী থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান এর নেতৃত্বে অবস্থান নেয় পুলিশ। মিছিলটি ফরিদপুর প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে খন্ড খন্ডে বিভক্ত মিছিলটি মুজিব সড়কের স্বর্ণকারপট্টি এলাকা থেকে একসাথে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শহরের গোয়ালচামট এলাকায় অবস্থিত শ্রীঅঙ্গন পযন্ত যায়। তবে পথে পথে বাধা দিয়েছে পুলিশ। শ্রীঅঙ্গন এলাকায় গিয়েও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বিক্ষোকারীরা।
এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের পুলিশ ধাওয়া দিয়েছে, লাথি মেরেছে, ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এরপরও সব বাধা অতিক্রম করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সনাতনী ধর্মম্বালম্বীরা।
জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা ৪টার দিকে পুলিশের বাধার মুখে বিক্ষোকারীরা এক পযায়ে কর্মসূচির জায়গা প্রেসক্লাব থেকে সরিয়ে শ্রীঅঙ্গনে হবে ঘোষণা দিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মুজিব সড়ক দিয়ে জনতা ব্যাংকের মোড়ের দিকে এগুতে থাকে। এসময় ওসি আসাদউজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা অতর্কিতে মিছিলের উপর চড়াও হয় এবং ধাওয়া দেয়। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিক্ষোভকারীরা আরোগ্য সদন সংলগ্ন প্রাইভেট হাসপাতালের গলি দিয়ে পালাতে থাকলে পুলিশ দৌড়ে গিয়ে তাদের উপর চড়াও হলে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ধাওয়া ও লাথি মারে এবং একজনকে আটক করে।
এরপর বিক্ষোভকারীরা আবার সংগঠিত হয়ে মুজিব সড়ক ধরে জনতা ব্যাংকের মোড় হয়ে আলিপুরের গোরস্থানের মোড় হয়ে হাজরাতলা ট্রাফিক পুলিশের মোড়ে মিছিলে পুলিশ বাধা দিলেও বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা ভাঙ্গা রাস্তার মোড় হয়ে শ্রীঅঙ্গনে যায়। পরে বিক্ষোভকারীরা শ্রীঅঙ্গনের সামনে দিয়ে শ্রীঅঙ্গন সেতু পাড় হয়ে আবার ঘুরে শ্রী অঙ্গনের দিকে এগিলে এলে ওসির নেতৃত্বে পুলিশ একটি বিশাল দল বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেয়। পুলিশ মিছিলকারীদের হাত থেকে ব্যানার ছিনেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সেখানে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ধ্বস্তাধস্তি হয়। পরে বিক্ষোকারীরা শ্রীঙ্গনের পুকুর সংলগ্ন সড়ক দিয়ে শ্রীঅঙ্গনের ভিতরে ঢুকে যায়। সেখানে সনাতনী জাগরণ জোট ফরিদপুরের পক্ষে বন্ধু কিশোর ব্রহ্মচারী বক্তব্য দিয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময়ও পুলিশের একটি শ্রীঅঙ্গনের সামনে দেখা গেছে।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি আসাদউজ্জামান বলেন, এ জাতীয় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের যারা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারা এ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। এসময় তিনি ফরিদপুরের কয়েকজন হিন্দু নেতার নাম বলেন। তিনি বলেন, যেহেতু গ্রহণ করা কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে সেজন্য এ কর্মসূটি পালনের আর কোন যুক্তি নেই বিধায় পুলিশ বাধা দিয়েছে।
কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের আহবায়ক অলোক সেন বলেন, ওসি তাকে ফোন করে জানান এ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। ঢাকা থেকে মানা করা হয়েছে। এজন্য কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। অল্প সময়ের জন্য এ বিষয়টি সকলকে জানানো যায়নি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :