শেরপুরে মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা-ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ২৬ শে নভেম্বর মঙ্গলবার ভোরে সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকাস্থ খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে ওই ঘটনা ঘটে। এতে হামলাকারী ও হামলার শিকার উভয় পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। একই সাথে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলামসহ ২৫ জনকে স্বনামে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫শ জনকে আসামি করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন দরবার শরীফের খাদেম মাহমুদান মাসুম।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই মুর্শিদপুর দরবার শরীফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়ে আসছিলেন সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের জামতলা এলাকার ফারাজিয়া আল আরাবিয়া ক্বওমী মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, স্থানীয় মো. খোরশেদ, মো. মজিবুর, মো. শহিদুলসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের একটি অংশ। তাদের অভিযোগ, পীরের দরবারে ইসলাম পরিপন্থী কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। তাই দরবার বন্ধের দাবিতে এর আগেও মাদ্রাসা ও লছমনপুর এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি-বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ভোরে মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, স্থানীয় মো. খোরশেদ, মজিবরসহ ৪/৫শ মানুষ মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা চালায়। এসময় তারা দরবারের পিছন দিয়ে টিনের বেড়া কুপিয়ে, ভেঙ্গে মহিলাদের সুরক্ষিত গেইট কুপিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বেশ কিছু দুম্বা, ভেড়া, ছাগল নিয়ে যায় বলে জানায় খাদেম মামুন। সে সময় দরবারে আঙ্গিনায় লাগানো দুইশতরও বেশি দেশী-বিদেশী ফল ও অনান্য গাছ কেটে ফেলে এবং অগ্নি সংযোগ করে ঘরের চকি ও পশুর খাদ্য খড় পুড়িয়ে ফেলে এবং হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটা ককটেলও পাওয়া যায় বলে জানাই খাদেম মামুন।
এসময় দরবারে থাকা খাদেম ও অন্যান্য মুরিদরা বাধা দিলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন আহত হন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দরবারে হামলাকারী সাতজনকে আহত অবস্থায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা দরবার থেকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠায়। তার মধ্যে একজন হাফেজ (৩৯) গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠালে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠায়। ২৭ শে নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরনকরে।
আহতরা হচ্ছেন, হামলাকারীদের মধ্যে (দরবার কর্তৃক জানানো হয়) আসিফ (২৫), শহিদুল ইসলাম (৩৫), আল মাসুদ (১৫), জিসান (২২) এনামুল হক (৩৯) ও জয়নাল (২৮)। এছাড়া মুর্শিদপুর দরবারের আহতরা হচ্ছেন, আব্দুল কুদ্দুছ (৪০), মোহন মিয়া (৪০), মন্টু মিয়া (৪২), আরিফ হোসেন (১৬), মনির হোসেন (২৪) ও সফর মিয়া (৪৫)। দরবারের খাদেম মো. মামুন অভিযোগ করে বলেন, হামলাকারীরা দীর্ঘদিন যাবত দরবার বন্ধের হুমকিসহ নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ভোরে তরিকুল ইসলাম, মজিবর, খোরশেদের নেতৃত্বে ৪/৫শ লোক দরবারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। আমরা ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার চাই।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের আপসের কথা বলে দরবারে ডেকে নিয়ে মারধর করেছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দরবারে তারা নিজেরাই বিভিন্ন জিনিস ভাংচুর করে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুবায়দুল আলম জানান, বর্তমানে মুর্শিদপুর দরবার এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় এক পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :