অতীতের প্রচলিত রেওয়াজে এবারেও অগ্রহায়ণের শুরুতেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নবান্ন উৎসবে মেতে উঠছেন কৃষক কৃষাণীরা।
পুরনো সেই রীতির ধারাবাহিকতায় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কৃষকের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব।এছাড়া নবান্নকে ঘিরে চলছে অতিথি আপ্যায়নের ব্যাপক আয়োজন।ইতিমধ্যেই উপজেলার কৃষক কৃষাণীরা ধানকাটা মাড়াইয়ের পাশাপাশি নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলছেন।
ধানকাটা মাড়াইয়ের জন্য মাটি ও গোবর গুলিয়ে কিষাণীরা বাড়ির উঠান ও ধানের গোলায় প্রলেপ দিয়ে বেশ পরিপাটি করেছেন।
ব্যস্ত কৃষক পরিবারের সদস্যরা নতুন ধান উঠানে আসার পরই তা মাড়াই করে রোদে শুকিয়ে চালকল থেকে আতপচাল করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কৃষাণীরা। পাশাপাশি নবান্ন উৎসবে মাতোয়ারা কৃষাণীরা পিঠা পায়েস তৈরির জন্য আতপচাল ঢেঁকি কিংবা যাঁতায় পিষে নেওয়া শুরু করছেন। সন্ধ্যা হলেই কিষাণীরা চালের গুঁড়ি নিয়ে রান্নাঘরে বসে পড়বেন নানা প্রকার পিঠা-পায়েস তৈরিতে।
দিনভর গতর খাটিয়ে পরিশ্রান্ত কৃষক বাড়ির এককোণায় বসে গুণগুণ করে আপন মনে গাইবে জারীসারি রকমারী গান। ততক্ষণে বাতাসে পিঠা-পায়েসের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়বে। পরিবারের ছোট ছেলেমেয়েরা পিঠা-পুলির স্বাদে তারাও আনন্দ আত্নহারা হয়ে নাচতে থাকবে।তবে নবান্নের এই উৎসব শহর বন্দরে তেমন চোখে পড়ে না।কিন্তু গ্রামগজ্ঞে আজও এই রীতি বিদ্যমান।
এবছর অগ্রহায়ণে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক পরিবারের এটাই নবান্নের চিত্র। এরইমধ্যে উপজেলার বেশকিছু গ্রামে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে।কৃষক-কৃষাণীরা কোমড় বেঁধে ধান কাটা মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কারো যেন দম ফেলার সুযোগ নেই।
সেইসাথে পিঠা-পায়েসসহ নবান্নের আয়োজনে কেউবা ধান কাটছেন, কেউবা করছেন মাড়াই। গৃহবধূ কেউ ধান সিদ্ধ করছেন, কেউ আতপচাল ঢেঁকি কিংবা যাঁতায় গুঁড়ি করছেন।নবান্নের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ডাকা হবে আত্নীয়স্বজন।ঘটবে আপনজনদের মিলনমেলা।
বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর গ্রামের নার্গিস আক্তার ঢেঁকিতে নতুন ধানের চাল থেকে গুঁড়ি করছিলেন। তার কাছে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, নতুন ধানের নতুন চাল। নবান্নের দিনে পিঠা-পায়েস খাব। এটা আমাদের পরিবারের দীর্ঘ বছরের প্রথা।
কৃষক খলিল মিয়া ও তপন কুমার বলেন, যদিও আগাম জাতের ধান অনেক আগে কাটা হয়, তার পরও আমরা কয়েক বছর থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহেই নবান্নের আয়োজন করে থাকি।
পাটানোছা গ্রামের কৃষক ইলিয়াস আলী বলেন, একই দিনে গ্রামের সবাই মিলে নবান্ন উৎসবের আয়োজনে খুব মজা হয়। নবান্নের দিনে নতুন ধানের পিঠা-পায়েসসহ ভালো খাবারের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বিশেষ প্রার্থনা করা হবে, যাতে আগামী দিনেও মহাধুমধামের সঙ্গে নবান্ন উৎসব উদযাপন করতে পারি। উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের প্রবীণ সাংস্কৃতিক কর্মী বাবলু চন্দ্র বলেন, এই নবান্নের উৎসব শুধু কৃষক পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রতিটি ঘরেই নবান্নের উৎসব হতো। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে নবান্ন উৎসব উদযাপন করত। এখন আর উপজেলার সংগঠনগুলো এ উৎসব করে না। তবে কৃষক পরিবারগুলো চিরাচরিত সেই নিয়মেই উৎসবমুখর পরিবেশে নবান্ন উৎসব উদযাপন করে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :