ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মো. সোবহান মিয়া (৬০) নামে একজন কৃষককে আ.লীগ সভাপতি বানিয়ে মামলায় ফাঁসানোর ঘটনা ঘটেছে। গত ২১ নভেম্বর ঢাকার মিরপুর মডেল থানায় নাদিয়া আক্তার রিয়া নামে এক মহিলা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। জানা যায়, এ মামলায় মো. সোবহান মিয়া এবং তার দুই ছেলেকেও আসামী করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে নাসিরনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে মো. সোবহান মিয়া নিজের সন্তানদের নিয়ে এ ঘটনা থেকে রেহাই পেতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সোবহান মিয়া বলেন, আমি ২৫-৩০ বছর ধরে ঢাকা যাই না। ঢাকার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। বাড়ির পাশের জমিতে আমি কৃষিকাজ করি। গ্রামের পাশে বাজারে আমার দুই ছেলে ব্যবসা করে। তাদের জন্য প্রতিদিন বাজারে খাবার নিয়ে যাই। আমি নাকি কারো পায়ের মধ্যে গুলি মারছি! ঢাকার এক মামলায় তারা আমার এবং আমার দুই ছেলের নাম দিয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকেলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কালাম উল্লাহ্ (৩০) নামে এক ব্যক্তি মিরপুর শপিং কমপ্লেক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ২১ নভেম্বর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাদিয়া আক্তার রিয়া নামে এক মহিলা বাদী হয়ে ৪৮ জনকে আসামি করে ঢাকার মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। এ মামলায় মো. সোবহান মিয়াকে ১৮নং আসামী করা হয়। মামলায় দেখানো হয়েছে সোবহান মিয়া নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি।
এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লতিফ হোসেন জানান, চাতলপাড় ইউনিয়নে সোবহান মিয়া নামে আওয়ামীলীগের কোনো নেতা নাই। চাতলপাড় ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হলেন অরুপ রায় চৌধুরী।
সোবহান মিয়ার মেয়ে উম্মে খাদিজা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বুধবার বিকালে বাবার সাথে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার পরিবারের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এখন শুনছি, আমার বাবা আর ভাইদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর মামলায় আসামী করা হয়েছে। আমার বাবা এবং পরিবারের কোন সদস্য কখনোই মিরপুরে যায়নি। আমার বাবা একজন কৃষক ও দুই ভাই বাজারের ব্যবসা করে।এ সময়ে তিনি আরও বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের জন্য যারা আমাদেরকে মামলার হুমকি দিত, এখন তারাই আমাদের মামলা দিচ্ছে। তা হলে আন্দোলন করে লাভ কি?
সোবহান মিয়ার ছেলে ও মামলার আসামী জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, এই মামলার সাথে আওয়ামী লীগের একটি চক্র জড়িত আছে। আমার চাচার সাথে জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে আমাদের। এ ঘটনায় আমার চাচা রউফ মিয়া ও চাতলপাড় ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া মামলা বাণিজ্যের এ মামলায় আমাদের নাম দিয়েছে।
এবিষয়ে জানতে এজাহারে থাকা মামলার বাদী নাদিয়া আক্তার রিয়াকে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পরই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য এডভোকেট একেএম কামরুজ্জামান মামুন বলেন, এই ধরনের মিথ্যা মামলা হওয়াটা দুঃখজনক। একজন নিরপরাধ ব্যক্তিও যেন মিথ্যা মামলার শিকার না হয় এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :