ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে টিসিবির পণ্য লুটের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাতে এ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন টিসিবির ডিলার মো.সোহাগ। টিসিবির মালপত্র লুট হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে দূর-দূরান্ত থেকে আসা উপকারভোগীদের খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপকারভোগীরা। জানা গেছে, সরিষা ইউনিয়নের ৭ শ,৮৫ জন উপকারভোগীর জন্য টিসিবির ৫০ কেজি ওজনের ৩১ বস্তা ডাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ডালগুলো বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে ট্রাকে এসে পৌঁছায়। এর পর ডিলার পরিষদের সচিবকে টিসিবির পণ্য এসেছে জানালে আসোম উদ্দিন নামে এক গ্রামপুলিশ সদস্যকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতে বলেন।
সচিবের কথামতো গ্রামপুলিশের উপস্থিতিতে ডিলার ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে পরিষদের পুরোনো একটি কক্ষে রাখেন। এ সময় স্থানীয় তাহের মিয়া,সবুজ মিয়া,দীন ইসলাম সেখানে উপস্থিত হন। তাঁরা ডিলারকে বলেন,এত রাতে মালপত্র নামাচ্ছেন,চুরি বা লুট হয়ে গেলে দায় কে নেবে? তাহের মিয়া বলেন,এক হাজার টাকা দেন,আমি পাহারার ব্যবস্থা করছি। তখন ডিলার ৫০০ টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু ৫০০ টাকায় হবে না জানিয়ে তাহের বলেন,দেশের যে অবস্থা, চুরি-ছিনতাই হলে আমাদের দোষারোপ করবেন না। এর পর তারা সেখান থেকে চলে যান। গ্রামপুলিশকে পণ্য বুঝিয়ে দিয়ে কক্ষে তালা দিয়ে চলে যান ডিলার। বৃহস্পতিবার সকালে ইউপি সচিব কল দিয়ে ডিলারকে জানান,কক্ষের দরজা-জানালা ভেঙে টিসিবির পণ্য চুরি হয়েছে। পরে এ বিষয়টি থানায় জানালে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। ডিলার মো.সোহাগ বলেন,আমি শতভাগ নিশ্চিত, এক হাজার টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামপুলিশসহ ওই ব্যক্তিরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে যেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাহলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অভিযোগের বিষয়ে গ্রামপুলিশ আসোম উদ্দিন বলেন,ডিলার আমাকে জানান টিসিবির মালগুলো পাহারা দিলে ৫০০ টাকা দেবে। আমি তাঁকে বলি, আমি অসুস্থ মানুষ,এক হাজার টাকা দেন অন্য কাউকে দিয়ে পাহারা দেওয়াই। পরে ডিলার আর আমাকে কিছু না বলে চলে যান। আমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এর পর সকালে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় দেখি,টিসিবির মাল রাখা রুমের দরজা-জানালা ভাঙা। পরে আমি বিষয়টি তাৎক্ষণিক সচিবকে জানাই। এ ছাড়া আর কিছু জানি না। এক হাজার টাকার বিনিময়ে পাহারাদারের ব্যবস্থা করার কথা স্বীকার করেছেন তাহের মিয়া। তিনি বলেন,যে ঘরটিতে পণ্য রাখা হয়েছিল, সেটার দরজা-জানালা আগে থেকেই ভাঙা ছিল। তাই বলেছিলাম দু-তিনজন পাহারাদারের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু ডিলার বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ায় আমি চলে যাই। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সত্য নয়। ইউপি সচিব মো.নুরুজ্জামান জানান,পরিষদের যে কক্ষে পণ্য রাখা হয়েছিল সেটি অনেক আগে থেকেই পরিত্যক্ত। দরজা-জানালা ভাঙা।
পাহারার জন্য এক হাজার টাকা চাইলেও ডিলার ৫০০ টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে অন্যরা সম্মত হননি। মধ্যরাতে তিনজনের বাইরে কোনো লোকজন ছিল না। তারা বলছেন, মালপত্র রেখে যাওয়ার পর সবাই বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এদিকে পরদিন সকালে এলাকায় টিসিবির ওই মালপত্র বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু মালপত্র লুট হওয়ায় উপকারভোগীরা তা পাননি। সরিষা গ্রামের তাহেরা বানু বলেন,বাজারে জিনিসপাতির যে দাম, পণ্যগুলো পেলে উপকার হতো। আমাদের রিজিকের ওপর যারা হাত দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, লুট হওয়া মালপত্র উদ্ধারসহ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তারের ভাষ্য, টিসিবির পণ্য লুটের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :