নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় রবি মৌসুমের শুরুতে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিসারের ভাষ্যমতে উপজেলায় পর্যাপ্ত সারের মজুদ থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ভিন্ন চিত্র। সরকার নিবন্ধিত ডিলারের কাছে কৃষক সার ক্রয়ের জন্য গেলেও সারের অভাবে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। ফলে বাধ্য হয়েই বাহির থেকে অতিরিক্ত মুল্যে সার কিনছে কৃষক। বিএডিসির সরকার নির্ধারিত ডিএপি ১ হাজার ৫০ টাকা স্থলে বাহিরে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা, মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ১ হাজার টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। ইউরিয়া ১ হাজার ৩৫০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিলারের ঘরে সার নেই। অভিযোগ রয়েছে বেশিরভাগ ডিলারই সারের একটি বড় অংশ কৌশলে লুকিয়ে বাহিরে বিক্রি করে ফেলে। ভুয়া সিগনেচার এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে কৃষি অফিসারকে দেখিয়ে কৌশলে সরিয়ে ফেলছে সার। আবার অতিরিক্ত দাম দিলেই বাহিরের প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের কাছে মিলছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসির) সরকারি সার।
উপজেলার গয়াবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, পুর্ব ছাতনাই, খালিশা চাপানি সহ একাধিক ইউনিয়নের ডিলারের সাথে কথা বলে জানা যায় অক্টোবর - নভেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত সার শেষ হয়ে গেছে। রবি মৌসুমে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক হারে ভুট্টার চাষ করার ফলে সারের চাহিদা বেশি থাকে।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে সরকারি সার গোপনে আগে থেকে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করলে আগেই খরব পেয়ে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায় অসাধু চক্রটি।
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ি বাজার ঘুরে একাধিক দোকানে সরকারি সার মজুদ দেখা গিয়েছে। তাছাড়া খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ডালিয়া ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চাপানি বাজারে, পুর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের কলোনি বাজারের বিভিন্ন দোকানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসির) সার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, এক মাস আগেই ডিলারের কাছে থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বস্তা প্রতি কিছু টাকা বেশি দিয়ে কিছু ডিএপি এবং এমওপি সার কিনে রেখেছিলাম। কৃষক পর্যায়ে তখন সারের চাহিদা কম থাকায় ডিলাররা বাহিরে গোপনে সার বিক্রি করে দিতো। এখন সেই সার বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছি। তাছাড়াও আমরা বাহিরের যেসব জেলায় সারের চাহিদা কম সেইখান থেকে সার কিনে বিক্রি করছি। দাম বেশির বিষয়ে তিনি বলে পরিবহন খরচ এবং সারের দাম কিছুটা বেশি রাখার কারনেই দাম বেশি রাখা হয়। তাছাড়া ভুট্টা লাগানোর সময় সারের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেও এই দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুটিবাড়ী বাজারে সার ক্রয়ের সময় তরুন কৃষক নাজিমুল হক বলেন, ডিলারের কাছে সার নেই। বাহিরের প্রত্যেকটা দোকানে সারের দাম বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে বেশি। জমি তো আর ফেলে রাখা যাবে না তাই বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে সার নিচ্ছি।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক সোহরাব আলী বলেন, তিন বিঘা জায়গার সারের জন্য ডিলারের কাছে বেশ কয়েকবার গিয়েও সার পাইনি। বাহিরের প্রতি বস্তা সারের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে বেশি।
ডিলারের বাড়ি থেকে রাতে গাড়িতে গাড়িতে সার বিক্রি হচ্ছে অথচ আমরা সারের জন্য গেলে বলে সার নেই।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মীর হাসান আল বান্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারি সার বাহিরে বিক্রি করার অনুমোদন নেই৷ ডিলার সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করবে। কেও যদি বেশি দামে সার বিক্রি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা সারের সংকট রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বছর সারের কোনো সংকট নেই। নভেম্বর আমাদের ডিএপি ৪০০ মেট্রিক টন এবং এমওপি ৩০০ মেট্রিক টন বরাদ্দ ছিলো। ডিসেম্বরের বরাদ্ধের সার কিছুদিনের মধ্যে ডিলারের কাছে পৌঁছে যাবে তখন কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে ডিলারের কাছে থেকে সার নিতে পারবে।
ডিলারের বাহিরের কেও সরকারি সার বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় যেসব জেলায় সারের চাহিদা কম ঐ জেলা থেকে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা সার কিনে এনে। তাদের পরিবহন খরচ বেশি পড়ার কারনে তারা কিছু টাকা বেশি দামে সার বিক্রয় করে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :