কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানে বিশেষ অবদান রাখায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের চরজোঁকা গ্রামের আত্ম-কর্মী কাজী আল-আমিনকে বিভাগ শ্রেষ্ঠ ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৪ এর জাতীয় যুব দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ রেজাউল মাকসুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মোহাম্মদ সাইফুজ্জামানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমীনে খোজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চরজোকা গ্রামের লিয়াকত কাজীর ছেলে কাজী আল-আমিন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন সব সময় লেগেই থাকতো। অর্থাভাবে তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। এতে তিনি মানসিকভাবে চরমভাবে ভেঙে পড়লেও উৎসাহ হারাননি । তিনি নিজের পরিবারের সামান্য পরিমান জমিতে কাজে মনোনিবেশ করেন। প্রয়োজনের তাগিদে অন্যের জমিতেও শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। চরম হতাশার মধ্যে তিনি আলোর সন্ধান পান। গ্রামের এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে শ্রীপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে ৭ দিনের অ-প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ৪’হাজার কোয়েল পাখি ও ৮`শ টি ব্রয়লার মুরগীর খামার স্থাপন করেন। পরে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার পরামর্শে ১ মাস মেয়াদী গবাদিপশু পালন ও গরু মোটাতাজাকরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কয়েক বছর পর মুরগীর খামার ও কৃষি প্রকল্পের পাশাপাশি ২’টি পুকুর লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ এবং গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প গ্রহণ করেন।
বর্তমানে তাঁর ৩টি পুকুরে মৎস্য চাষ, ১০ একর জমিতে বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি, পেঁয়াজ, রসুন, ধান, পাট, গম, ভূট্টা, সূর্যমুখী, জিরা, বস্তায় আলু ও আদা চাষ, ভার্মি কম্পোস্টসহ বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। বর্তমানে তাঁর প্রকল্পে ৮টি গরু, ৬টি ছাগল, ৫`শ টি কোয়েল পাখি, ১`শ ২০ টি কবুতর, ৭`শ টি সোনালী মুরগী রয়েছে। তাঁর খামারে ৬ যুবক ও যুব নারীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ২০২৪ সালে কাজী আল-আমিন শ্রীপুর উপজেলা পর্যায়ে সফল আত্ম-কর্মী হিসেবে পুরস্কার পান। তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় উপজেলার অনেকেই সফল আত্মকর্মী হয়েছেন। বর্তমানের তাঁর বার্ষিক আয় ১৬ লাখের উর্ধ্বে।
আত্ম-কর্মী কাজী আল-আমিন বলেন, আমার পক্ষে বিভাগীয় পুরস্কার পাওয়া সত্যিই গর্বের বিষয়। পুরস্কার পেয়ে আমি নিজেকে ধণ্য মনে করছি। পরিশ্রম করলে কাজে সফলতা আসবেই। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি তার সফলতাও পেয়েছি। এ সফলতার পিছনে উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অনেক অবদান ছিল। যুব উন্নয়নের দেওয়া প্রশিক্ষণ ও ঋণের টাকায় আমি খামার শুরু করি এবং সফলতায় পাই। পাশাপাশি যারা আমাকে পাশে থেকে সাহস ও উৎসাহ জুগিয়েছেন, তাদের কাছেও আমি ঋনী।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :