AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ধনবাড়ী উপজেলার মৃৎশিল্পের কারিগররা ভালো নেই


Ekushey Sangbad
জহিরুল ইসলাম মিলন, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল
০৩:৪১ পিএম, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
ধনবাড়ী উপজেলার মৃৎশিল্পের কারিগররা ভালো নেই

কেউ তৈরি করছেন মাটির পুতুল, ঘোড়া, গরু, হাতি, ময়ূর, খেলনা, কেউ আবার  তৈরি করছেন হাঁড়ি, পাতিল, থালাসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী। আবার রং-তুলি দিয়ে সেসব সামগ্রী দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলছেন কেউ কেউ। বিভিন্ন আকার ও শৈলীতে তৈরি হচ্ছে এসব পণ্য। ধনবাড়ী পৌর সদরের ৯ নাং ওয়াডের পালবাড়ি, যদুনাথপুর  ইউনিয়নের ইসলাম পুর পালপাড়া  গ্রামে এসব মৃৎশিল্পীর বসবাস। যুগ যুগ ধরে মাটি দিয়ে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করে আসছেন তারা।

মাটির সঙ্গে এ গ্রামের মানুষের গভীর সম্পর্ক। কিন্তু এই মানুষগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রযুক্তির যুগে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসের জায়গা দখল করেছে স্বল্প দামের প্লাস্টিক ও লোহার তৈরি পণ্য। সে কারণে বাজারে মাটির তৈরি আসবাবপত্রের চাহিদা না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই। তবুও মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা তাদের কর্মদক্ষতার দ্বারা এই শিল্পটাকে আঁকড়ে ধরে এখনো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন।

ধনবাড়ী  শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের  যদুনাথ পুর  ইউনিয়নের ইসলামপুর কুমারপাড়া গ্রাম। ওই গ্রামের প্রায় ২০/২৫টি পরিবার জীবন ও জীবিকার তাগিদে মৃৎশিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে। এছাড়া জেলায় বিছিন্নভাবে আরও ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার এই পেশার সঙ্গে জড়িত। কিন্ত মাটির অভাব, প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

মাটির তৈরি এসব সামগ্রীর ন্যায্যমূল্য না থাকায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এরপরও কিছু পরিবার এই পেশা আঁকড়ে ধরেই কম বেশি যা আয় করছেন তা দিয়েই পরিবারসহ টিকে রয়েছেন। এসব পরিবারের অধিকাংশেরই মাঠে কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। বসতভিটার মাত্র দুই এক কাঠা জমিই তাদের শেষ সম্বল।

বাড়ির উঠানে কিংবা পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে মাটি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার পণ্য তৈরি করছে গ্রামের মানুষ। সেখানকার একাধিক বাসিন্দা জানান, সকাল থেকে শুরু হয় এসব পণ্য তৈরির কাজ। এরপর রোদে শুকানো ও রং-তুলির সাহায্যে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। নারী-পুরুষরা সমানতালে এই কাজ করেন। তাদের সহযোগিতা করেন ছেলেমেয়েরাও।

বাড়ির উঠানে বসে কাজ করছিলেন উষা রানী পাল তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদার হাতে এসব শিখছি। এখন স্বামীর সংসারে ১৫ বছর ধরি এই কাম করি। স্বামী, বেটি অরাও এই কামই করে। তাও সংসার চলে না।’

স্থানীয় নিরেন পাল বলেন, ‘প্লাস্টিকের ভাড়া পাতিল বের হয়ে হামার মাটির জিনিস কেউ নেয় না। বছরে একবার পহেলা বৈশাখ, হিন্দুর বিয়া বাড়ি ও বিভিন্ন পূজার সময় একটু বেচাকেনা হয়। অন্য সময় তাও হয় না। এক সময় এই ব্যবসার যথেষ্ট কদর ছিল। বাড়িতে এসে পাইকাররা বায়না দিয়ে যেত। এখন আর সেই দিন নাই। আগে কামাই খুব হইত। কিন্তু এখন পেটই চলে না।’

একই গ্রামের মৃৎশিল্পী বিকাশ চন্দ্র পাল বলেন, পুরুষদের প্রধান কাজ মাটি কিনে সেগুলো কাদা করা ও ভাটায় পোড়ানো। এরপর এসব সামগ্রী নিজ হাতে তৈরি করেন বাড়ির নারী ও ছেলে মেয়েরা। আর এসব তৈরি সামগ্রী বাজারে বিক্রি করি আমরা। কিন্ত দিন দিন চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন হাত পড়েছে কপালে।

মাটির সামগ্রী বিক্রি করা কৈলাস চন্দ্র পাল বলেন, মাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলস, সারোয়া, পেচি, তাওয়ার এক সময় খুব চাহিদা ছিল। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সামলানোই কষ্টকর ছিল। এখন হাটে আসা যাওয়ার ভ্যান ভাড়াই তুলতে পারি না। আগে গরমে পানি রাখার একটি কলস বিক্রি হতো ৩০-৪০ টাকা। এখন ফ্রিজ বের হয়ে কলসের কোনো চাহিদা নাই। হঠাৎ এক-দুইটা বিক্রি হয়, তাও পানির দামে দিতে হয়।

 প্লাস্টিকের উৎপাদিত পণ্যের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মৃৎশিল্প।এতে বিপাকে পড়েছেন এই পেশার সঙ্গে জড়িতরা।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!