জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ৫ তারিখের পরিবর্তনের পর মানুষ যখন শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে তখন এই শান্তি আবার কেড়ে নেওয়ার জন্য দফায় দফায় আমাদের ওপর হামলা চলছে এই দেশের ভিতরে। আমাদের আকাশের কালো মেঘ পুরোপুরি কেটে যায়নি। কালো শকুনের থাবা এখনো মেলার চেষ্টা করছে। তবে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে বলতে পারি জীবন দেব, তবু দেশের এক ইঞ্চি জমি কাউকে দেব না।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে ফরিদপুর জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফরিদপুর শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জামায়াতের আমির বলেন, যে জাতি ঐক্যবদ্ধ ভারেব লড়াই করে সে জাতিকে পরাজিত কেউ করতে পারে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আগামীতে যত চ্যালেঞ্জ আসবে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে মোকাবিলা করব। আমরা দারুন আশাবাদী যে আগামীতে একটি সোনালী বাংলাদেশ গঠন করা যাবে।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাদেরকে সম্পদ মনে করতে পারলে আমরা জনগণের অংশ হয়ে জনগণের মুক্তির জন্য যদি লড়াই অব্যাহত রাখতে পারি, তাহলে জনতার মুক্তি আসবে। সেই মুক্তির লড়াইয়ে আপনাদের প্রস্তুত হওয়ার জন্য নিজের নৈতিক মান, জাগতিক মান উন্নত করার জন্য এবং আরও বড় ত্যাগের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের যদি আল্লাহ সুযোগ দেন তাহলে সবাই মিলে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করব। আমরা এমন একটি দেশ চাই যেখানে ধর্মে বর্ণে কোনো হিংসা হানাহানি থাকবে না। মন্দির পাহারা দেওয়ার দরকার হবে না, মসজিদও পাহারা দেওয়ার দরকার হবে না, গির্জাও পাহারা দেওয়ার দরকার হবে না, প্যাগোডাও পাহারা দেওয়ার দরকার হবে না। মানুষ মানুষকে সেদিন সম্মান করবে এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের ব্যাপারে অপবাদ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে মহিলাদের ঘর থেকে বের হতে দেবে না। ভাব এমন যেন সব ঘরের জন্য আমরা পিতলের তালা তৈরি করে রেখেছি। ক্ষমতায় যাওয়ার পরের দিন পুরুষদেরকে ডেকে ডেকে বের করে বাইরের থেকে তালা মেরে দেব যে তোমরা আর বের হতে পারবে না মহিলারা যারা আছো। যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সা.) মহিলাদের শামিল করেছেন, আমরা কে তাদের ঘরে তালা মেরে রাখার।
তিনি বলেন, ভয় দেখানো হয় এরা (জামায়াত) রাজ্য কায়েম করলে সবাইকে জোর করে কালো বোরকা পরাবে। জোর করে কাউকে কালো বোরকা পরানো হবে না। মনের খুশিতে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে যারা পরতে চায় পরবে। অন্য ধর্মের যারা আছে তাদেরকে আমরা জোর করে বোরকা কীভাবে পরাবো। তারা তো এ ধর্মের ওপর ঈমান আনেনি। যারা ইসলামে ঈমান আনেনি তাদের ওপর কি ইসলামের পর্দা করা বাধ্যতামূলক? তাদের ওপর এ জোর খাটানোর অধিকার আমাদের কে দিয়েছে? কেউ ঈমান ও ইসলামকে বুকে ধারন করে বোরকা পরতে চাইবে তাদেরকে যেমন তিরস্কার করা হবে না ঠিক তেমনিভাবে কেউ বিশেষ কারণে বা ধর্মীয় কারণে যদি ওরকম পোশাক না পরে তাকেও তিরস্কার করা হবে না। এই বক্তব্যই কালকে (শনিবার) আমি সাতক্ষীরায় রেখেছিলাম। কিন্তু একটা টিভি আমার বক্তব্যকে বিকৃত করেছে। তারা বলেছে জামায়াতের আমির নাকি বলেছেন যে যেমন ইচ্ছা মহিলারা পোশাক পরতে পারবে। বেশির ভাগ মিডিয়া এখন সত্যকে সত্য হিসেবে তুলে ধরছে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। দুই-একটা মিডিয়া যেন মিডিয়া জগতের দুর্নামের কারণ না হয়, মিডিয়া জগতের বন্ধুদের সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।
জামায়াতের আমির বলেন, সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে ধ্বংস করার জন্য পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা চাই। পাশাপাশি এর সুইচ কার হাতে ছিল তার পরিচয় আমরা জানতে চাই।
কোনো দেশপ্রেমিক পালিয়ে যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে ভালোবাসেনি, তারা দেশপ্রেমিক নয় বলে পালিয়ে গেছে। মানুষকে ভালোবাসলে দেশ থেকে পালাতে হয় না।
জামায়াতের আমির বলেন, আওয়ামী লীগ দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করেছে। তবে এক লাখ টাকার উন্নয়তে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে চার লাখ টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ হামিদুর রহমান আযাদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাররক হোসেন।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও অঞ্চল টিম সদস্য আবদুদ তাওয়াব, জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের ছেলে আলী আহসার মাবুরুর, সাবেক সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে হাসান মওদুদ প্রমুখ।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :