শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও শান্তি ফেরেনি পার্বত্য অঞ্চলে। বরং নতুন নতুন দলের আবির্ভাবে বেড়েছে দ্বন্দ্ব সংঘাত। এই দিনে সংঘাত ও বিভক্তি দূর করতে আঞ্চলিক দলগুলো শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি করলেও সাংঘর্ষিক ধারাগুলো বাতিলের দাবি করেছেন বাঙালি সংগঠনটি।
এমন পক্ষ বিপক্ষের নানা আয়োজন ও দাবির মধ্য দিয়ে বান্দরবানে শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) শহরের বিভিন্ন জায়গায় পক্ষে - বিপক্ষ সরকারি দপ্তর ও সংগঠনগুলো এ পূর্তি উদযাপন করেন।
প্রায় ১২ বছর পর জনসংহতি সমিতি রাজার মাঠে প্রকাশ্যে জনসভা করেছে।এ সময় জনসভায় বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সালিম রাজা নিউটন, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন।
জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জনসভায় অংশগ্রহণ করেছে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীরা।
এছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সরকারের পক্ষে পায়রা উড়িয়ে শান্তি চুক্তির বর্ষপূর্তি উদযাপন করে পার্বত্য জেলা পরিষদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, সেনাবাহিনীর বান্দরবানের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মেহেদী হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কর্নেল জামশেদ, জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ, পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ কাওছার। জেলা সদর ছাড়াও সরকারের পক্ষে সাত উপজেলায় জনসভা,বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা,কম্বল বিতরণসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।
এছাড়াও শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা সংস্কার ও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দল বালাঘাটায় সমাবেশ করেছে। এদিকে শান্তিচুক্তির সাংঘর্ষিক ধারাগুলো বাতিল ও জেলা পরিষদ,উন্নয়ন বোর্ডে বাঙালি চেয়ারম্যান নিয়োগের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ বান্দরবান জেলা কমিটি ।
শান্তি চুক্তির ২৭ বছর পার হলেও পাহাড়ে এখনও বন্ধ হয়নি অস্ত্রের ঝনঝনানি। পাহাড়ি তিন জেলায় সশস্ত্র ৬টি সংগঠনের আধিপত্যের লড়াইয়ে নিহত হয়েছে হাজারো মানুষ। আহত ও উদ্বাস্তু হয়েছে আরও অনেকে। অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বারংবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়ের উন্নয়ন ও শান্তির ধারা।
উল্লেখ্য, শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর চুক্তির বিরোধিতা করে একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এরপর থেকে পাহাড়ে আবারও অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। গেল ২৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ ভেঙে হয়েছে ৪টি সশস্ত্র সংগঠন। এ ছাড়া পার্বত্য বান্দরবানে কুকি চীন ও মগ পার্টি নামে আরও ২টি সশস্ত্র সংগঠনের জন্ম হয়েছে।
এসব দলের সদস্যরা লিপ্ত হচ্ছে চাঁদাবাজি, গুম, খুন ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতে। ফলে পার্বত্য ৩ জেলায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদা ও অপহরণ নিয়ে থেমে থেমে হচ্ছে প্রাণহানি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :