একসময় গ্রাম এলাকায় চোখ যেদিকে যেত সেই দিকেই দেখা যেত সারি সারি খেজুর গাছ। শীত কালে খেজুর গাছের মাথায় রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা গাছের মাথা পরিচর্যা করে টাঙ্গিয়ে রাখত মাটির হাঁড়ি ও কলস। এমনকি খেজুর গাছের মাথা জুড়ে থোকায় থোকায় হলুদ হয়ে ঝুলে থাকত খেজুর ফল। ছোট বেলায় ভোর হলেই খেজুর গাছের নিচে ছুটে গিয়ে দলবেঁধে কুড়ানো হত পাকা পাকা খেজুর ফল। কিন্তু দিন দিন কালের পরিবর্তনে গ্রাম অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসুস্বাদু খেজুরের রস ও খেজুর ফলের গাছ।
ফলে,খেজুর গাছ বিলুপ্তির জন্য একদিকে কমছে খেজুর গুড়ের উৎপাদন। পাশাপাশি হারাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। খেজুরের গাছ আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। খেজুরের গাছ থেকে শুধু রস গুড় বা খেজুর ফল পাওয়া যায়না,খেজুর গাছের পাতা দিয়ে শীতল পাটিও তৈরি করা হয়ে থাকে। গ্রাম অঞ্চলের প্রায় বাড়িতে এই খেজুর গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা শীতল পাটি এখনো ব্যবহার করা হয়। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের চাইতে বর্তমানে তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কমে গেছে খেজুর গাছের পাতার তৈরি শীতল পাটির ব্যবহার। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা খুবই কম। যেটুকু দেখা যায় তাও ব্যাক্তিগত খেজুর গাছ। যার জন্য মন চাইলেও এখন আর ইচ্ছেমত খেজুর ফল পাওয়া যায়না। হয়না খেজুর গাছের পাতা দিয়ে শীতল পাটি তৈরি করা।
তানোর পৌর এলাকার শিতলী পাড়া গ্রামের খেজুর গাছের রস সংগ্রহকারী কছিমুদ্দিন জানান, আজ থেকে ১০/১২বছর আগে বিপুল পরিমাণে খেজুর গাছ দেখা যেত। সরকারি রাস্তার পাশে ও ব্যক্তিগত মানুষের খৈলানে ডাঙ্গা জুড়ে সারি সারি খেজুর গাছ ছিলো। গাছে গাছে হলুদ হয়ে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকত পাকা পাকা খেজুর ফল। খাওয়ার তেমন কোন লোক ছিলনা। কিন্তু এখন আর তেমন খেজুর গাছ চোখে পড়ে না। তবে, প্রাকৃতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে যেমন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা গুড় উৎপাদন করে অর্থ উপার্জন করা হয়,তেমন খেজুর গাছ থেকে সুস্বাদু ফল খেজুর ও খেজুর গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা শীতল পাটিও বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়।
অন্যদিকে খেজুর গাছ পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে। তাই বাড়ির আশেপাশে যেখানে ফাঁকা জায়গা পড়ে রয়েছে,সেখানেই খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে। তাহলে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে ও খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদনও বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান,খেজুর গাছ একটি আল্লাহর বড় নিয়ামত, খেজুর গাছ থেকে ভালো অর্থ আয় করা সম্ভব। তাই বেশি বেশি করে ফাঁকা জায়গায় খেজুর গাছ লাগানোর আহবান জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :