কর্মসংস্থান যেকোনো দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক সীমিত। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যায় এবং বলা হয় বেকারত্ব সমাজের অভিশাপ। একটি রাষ্ট্রের পক্ষে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন আত্মকর্মসংস্থান। আত্মকর্মসংস্থানের ধারণা হচ্ছে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিজেই করা। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে একজন মানুষ শুধু নিজের বেকারত্ব দূরীভূত করা নয়, পাশাপাশি আরো অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজ তথা রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাই হচ্ছে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার অন্যতম উপায়।
আত্মকর্মসংস্থানে যারা জড়িত হবেন তাদের মনে আত্মবিশ্বাস তৈরি খুবই দরকার। নানা ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে আত্মবিশ্বাস। আর এ আত্মবিশ্বাস আত্মকর্মসংস্থানকে পেশা হিসেবে নিতে উৎসাহিত করে এবং ঝুঁকিও হ্রাস করে। আত্মকর্মসংস্থান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা একইসঙ্গে আমাদের সমাজ থেকে দূর করে দিতে পারে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো বড় জাতীয় সমস্যাকে। প্রয়োজনীয় অর্থ, পুঁজি, প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকার বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরিতে এগিয়ে আসলে বদলে যেতে পারে সেই হতাশাগ্রস্ত মানুষের জীবন। সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক, সরকারের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পশুসম্পদ অধিদপ্তর, এনজিও, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থাসহ আরো নানা প্রতিষ্ঠান পুঁজি বিনিয়োগসহ প্রশিক্ষণ, পরামর্শ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশে জমির অপ্রতুলতা, ব্যাপক বেকারত্ব, নিদারুণ পুষ্টিহীনতা, মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা, মহিলা ও বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান, সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় মাশরুম একটি সম্ভাবনাময় ফসল। এ দেশের আবহাওয়াও মাশরুম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। অমিত সম্ভাবনাময় ফসল মাশরুম চাষের জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় দেশে মাশরুম উৎপাদন যতই বাড়ানো হোক না কেন তাতে কোনো ফসলেরই উৎপাদন কমার সম্ভাবনা নেই। যার মোটেই চাষের জমি নেই তিনিও বসতঘরের পাশের অব্যবহৃত জায়গায় অনেক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করতে পারেন। আবার শিল্পাকারেও মাশরুম চাষ সম্ভব। গ্রামগঞ্জে, শহরে এমনকি অতিমাত্রায় বিলাসীদের প্রাসাদেও মাশরুম স্থান পেয়েছে। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। স্বাদ, পুষ্টি, ও ঔষধিগুণের কারণে এরই মধ্যে এটি সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাশরুম চাষ একটি শ্রমঘন কাজ। অল্প জায়গায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা যায়। যেকোনো পর্যায়ের মানুষ, ধনী-দরিদ্র, ভূমিহীন, বেকার, গৃহবধূ, প্রতিবন্ধী সবাই মাশরুম চাষ করতে পারেন। এজন্য মাশরুম চাষ আমাদের দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মাশরুম চাষ শুরু করার জন্য অধিক পুঁজির প্রয়োজন হয় না বিধায় হতদরিদ্র, ভূমিহীন মানুষও মাশরুম চাষ করতে পারেন। মাশরুম চাষে অল্প দিনেই ফলন পাওয়া যায় এবং লাভসহ পুঁজি ঘরে আসে। তাই, দারিদ্র্য দূরীকরণে মাশরুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সম্ভাবনাময় এ ফসলটির চাষ সম্প্রসারণের প্রধান অন্তরায়গুলো হলো- আমাদের খাদ্যাভ্যাসে মাশরুম না থাকা, এ দেশের প্রচলিত অন্যান্য ফসলের চাষ পদ্ধতির সঙ্গে মাশরুম চাষ পদ্ধতির মিল না থাকা এবং মাশরুম চাষে উচ্চ মূল্যের যন্ত্রপাতি ও উচ্চপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হওয়া। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এ দেশে মাশরুম চাষের উপযোগী স্বল্প খরচের যন্ত্রপাতি ও সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে, তবুও এসব যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জনগণের ব্যাপক পরিচিতির অভাব রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, মাশরুমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য, ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে মাশরুম চাষে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণের, যেখানে সহজ-সরল প্রযুক্তির প্রদর্শন থাকবে এবং প্রশিক্ষণ শেষে যে কেউ মাশরুম চাষ, স্পন উৎপাদন, মাশরুম বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে পারবেন।
ইতিমধ্যেই ধনবাড়ী হটিকালচার সেন্টার প্রতি কর্মদিবসে ‘মাশরুম অবহিতকরণ ও কার্যক্রম প্রদর্শন’ শীর্ষক অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধনবাড়ী উপজেলার অনেক মানুষ এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হতে
শুরু করছেন । বর্তমানে ‘মাশরুম অবহিতকরণ ও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেইজও খোলা হয়েছে। এই পেজে প্রায় শতাদিক সদস্য রয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই মাশরুম চাষের মাধ্যমে নিজেদের এবং অন্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। সব সদস্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের মাশরুমের উন্নয়নে বিশেষভাবে অবদান রাখবেন।
ধনবাড়ী হটিকালচার সেন্টার উদ্যানতত্ত্ববিদ মোঃ রাসেল পারভেজ তমাল বলেন, সর্বপরি প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ শুরু করতে পারেন এই মাশরুম চাষ। আর ঘরে বসে আয় করতে পারেন বাড়তি কিছু টাকা। একজন মানুষ যেকোনো কাজের বা চাকরির পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে বাড়তি কিছু আয় করতে পারেন। আবার মাশরুমই হতে পারে তার বাঁচার/আয়ের একমাত্র উৎস। এভাবে দেশের অনেকেই মাশরুম চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন, নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন ও অন্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :