চাঁদপুরের মেঘনায় জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় নিহত ফরিদপুরের সবুজ শেখের বাড়িতে চলছে মাতম। খবর পেয়ে নিহতদের বাড়িতে ভিড় করছেন পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা, শোকে স্তব্ধ সবাই। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে ফরিদপুর জেলা সদরের গেরদা ইউনিয়নের জোয়াইর গ্রামে সবুজ শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবুজের বাড়িতে চলছে মাতম। তার বৃদ্ধ মা রাজিয়া বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তার সাথে কাদছেন পাড়া প্রতিবেশী আত্মীস্বজন।
রাজিয়া বেগম কাঁদছেন, তাকে অনেক সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা। কিন্তু কান্না থামছে না রাজিয়া বেগমের। কাঁদছেন আর বলছেন আমার বুকের মানিককে ফিরিয়ে দেও। দুই দিন আগে কথা হয়েছিল ওর মামাতো বোনের বিয়েতে বাড়িতে আসবে মামা কিবরিয়ার সাথে। আমার সবুজ আসছে কিন্তু লাশ হয়ে।
রাজিয়া বেগম বলেন, ‘আমি কীভাবে সইবো, আমার ছেলে ও আমার ভাই দুই জনেই এক সাথে চলে গেলো। আমার বুক যারা খালি করেছে, তাদের শাস্তি চাই।’
সবুজ শেখের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘সোমবার বিকাল সাড়ে চার টার দিকে খবর পাই জাহাজে ডাকাতি হয়েছে। এরপর সবুজকে ফোন দেই কিন্তু ওর ফোন বন্ধ পাই, এরপর মামাকে ফোন দিয়ে দেখি তার ফোনও বন্ধ। পরে বিভিন্ন টিভিতে খবর দেখে রওনা দিই। হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাই সবুজ ও মামা কিবরিয়া বিশ্বাসের মরদেহ শনাক্ত করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘খুব নির্মমভাবে ওদের হত্যা করা হয়েছে। দুই মাস আগে সবুজকে জাহাজে চাকরি দেয় মামা। একই জাহাজে চাকরি করতো ওরা দুই জন। মামাতো বোনের বিয়েতে দুই জনের একসাথে বাড়িতে আসার কথা ছিল। এ হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাই।’
প্রতিবেশী সেফায়েত হোসেন বলেন, ‘এত অল্প বয়সে এভাবে সবুজকে চলে যেতে হবে আমরা মানতে পারছি না। সবুজ এখনও বিয়ে করেনি। চাকরি পেয়েছে, বিয়ে করবে, সংসারের হাল ধরবে কত স্বপ্ন ছিল। তার আগেই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হলো। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। ৬ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে সবুজ ছিল চতুর্থ।’
গেরদা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘সবুজ ও কিবরিয়ার মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের মাতম চলছে। আমরা তাদের এ মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। যারাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের দাবী জানাই। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের পাশে সরকারের দাঁড়ানোর আহবান জানাই।’
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত সবুজের মরদেহ এলাকায় এসে পৌঁছায়নি। জোয়াইর গ্রামের কবরস্থানে মামা কিবরিয়া ও ভাগ্নে সবুজের পাশাপাশি দাফন সম্পন্ন করা হবে। চলছে কবর খননের কাজ।
উল্লেখ,সোমবার সকালে চাদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীতে সারবাহী জাহাজ থেকে খুন হওয়া আরও ছয়জনের সঙ্গে উদ্ধার করা হয় সবুজের মরদেহ।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :