নড়াইলে ধর্ষণের পর ইউপি সদস্য বাসনা মল্লিকের মুখে বিষ ঢেলে হত্যা। নড়াইল সদরে বাসনা মল্লিক (৫০) নামের এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে তার বাড়িতে নেয়া হয়। ইউপি সদস্য বাসনা মল্লিকের ছবি নিয়ে আর্তনাদ করছেন স্বজনরা।
নিহত বাসনা মল্লিক নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১, ২, ৩ ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য (মেম্বার) এবং ওই ইউনিয়নের পোড়াডাঙ্গা গ্রামের নেপাল মল্লিকের স্ত্রী।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম ইউপি সদস্য বাসনার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে টিসিবির মালামাল বিতরণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় যুবক রাজিবুলের ফোন কলে পাওনা টাকা আনতে যান। মাইজপাড়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মোক্তার মোল্যার বাড়িতে রাজিবুলসহ ফারুক, চঞ্চল, শফিকুল মিলে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে এবং দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
ভুক্তভোগী বাসনা মল্লিক বিষয়টি জানিয়ে দেবে বললে হুমকি-ধমকি দিলে তার মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়। বাড়িতে ফিরে এ ঘটনায় ভয়ে তিনি কাউকে কিছু বলেননি। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তিনি ছেলে রিংকু মল্লিকের কাছে তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা ও জড়িতদের নাম বলেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে তার মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে আর স্বজনদের অভিযোগে উঠে আসে ইউপি সদস্য বাসনা মল্লিকের ওপর চালানো হয় সংঘবদ্ধ নির্যাতন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোক্তার মোল্যার স্ত্রী সাহিদা ও পুত্রবধূ সোনিয়া বলেন, মেম্বার বাসনা আসছিলো, তারে ডেকে আমাদের ঘরে নিয়ে যায় ওরা (অভিযুক্ত রাজিবুল, শফিকুল, চঞ্চল,ফারুক)। তারপর তিনি চলে যেতে চাচ্ছিলেন কিন্তু জোর করে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে জোর করছিল।
বাসনা মল্লিককে হারিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ স্বজনদের। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ। বাসনা মল্লিকের ৮০ বছর বয়সি মা সুন্দরী হালদার ছবি হাতে বিলাপ করছেন, মা কই, আমার মা কই? জনপ্রিয় এমন জনপ্রতিনিধি বাসনার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ক্ষোভ জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও তার সহকর্মীরা।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের এ ঘটনার সত্যতা জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ আমাদের অবহিত করেন, ইউপি সদস্য বাসনা মল্লিকের পেটে বিষের ট্রেস রয়েছে এবং তার সাথে একাধিক ব্যক্তির জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কের আলামত পাওয়া গেছে। এ তথ্য পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। বিষয়টি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :