সরিষা ক্ষেতের জন্য মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা খুবই পরিচিত একটি নাম। শীতের কুয়াশায় ধূসর প্রান্তর, চারদিকে হলুদের সমাহার। মনে হয় যেন রূপকথার রাজকুমারীর গায়ে হলুদ। প্রজাপতি, মৌমাছি, হলুদিয়া-নীলরঙা পাখি, পোকামাকড় থেকে শুরু করে অনেক কিছু দেখা যায় এই রাজ্যে! সবাই যেন হুমড়ে পড়ে হলুদের ওপর।
মাঠের পর মাঠ হলুদে একাকার। মাঝে সরলরেখার মতো সরু মেঠোপথ। পথের দুপাশে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত সরিষা ফুলের সারি। কুয়াশা ভেদ করে বয়ে চলা মৃদ হাওয়ায় দোল খাওয়া সরিষা মাঠকে মনে হচ্ছে ঢেউ খেলা হলুদ সমুদ্র।
সরিষা ফুলে ঘুরে বেড়ানো মধু পিয়াসী মৌমাছির গুণগুণ-গুঞ্জরণে সৃষ্ট আবহ মাতিয়ে তোলে হাজারও প্রকৃতিপ্রেমীদের। এমন আবেশে কে না হারিয়ে যেতে চায়! প্রিয় মানুষটিকে প্রকৃতির এমন আবহে প্রতিস্থাপন করে স্বপ্ন বুনতে চায় প্রেমিক মন।
এমন মোহেই হয়তো পল্লীকবি জসিম উদ্দিন লিখেছিলেন,
আরো একটুকো এগিয়ে গেলেই সরষে ক্ষেতের পরে,
তোমারে আমার যত ভাল লাগে,
সে অনুরাগে হলুদ বসন
বিছাইয়া আছে দিক দিগন্ত ভরে।
দুধারে অথৈ সরিষার বন
মাঝখান দিয়ে সরু বাঁকা পথখানি।
দোষ নিওনাক ফুলেরা তোমার
ধরিলে আঁচল টানি।
ছুটি কিংবা অবসর সময়ে শত শত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছুটেছে এ অঞ্চলে। আর এমন সুন্দর দৃশ্য ধারণ করতে চলছে সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা। রাজধানীর কাছেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা। চাইলে সপরিবারে কিংবা আপনার প্রিয় মানুষটিকেও এই ভ্রমণে সঙ্গী করতে পারেন। চোখে সরষে ফুলের অপার সৌন্দর্য দেখার সঙ্গে বোনাস হিসেবে পাবেন শীতের সকালে খেজুরের রস, স্থানীয় মজাদার খাবারের স্বাদ, পদ্মা নদী দেখা ও নদীতে সাঁতার আর বিরামহীন ছবি তোলার সুযোগ।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সরজমিনে গিয়ে কথা হয় উপজেলার লাউতা গ্রামের সরিষা চাষি আবু বকরের সাথে তিনি বলেন, সরিষার আবাদ এই উপজেলার একটি ঐতিহ্য। প্রায় সব কৃষকই সরিষার আবাদ করেন। সবাই একযোগে সরিষা বোনার কারণে একসঙ্গে চারা বড় হওয়ার পাশাপাশি ফুলও আসে। ফলে সরিষা মাঠ হলুদে ছেয়ে যায়।
সরিষা ক্ষেতে লোকজনের ছবি তোলা প্রসঙ্গে কৃষকেরা বলেন, অনেকেই ক্ষেতের মাঝখানে ঢুকে যায়। এতে কিছু সরিষা নষ্টও হয়। তারপরও আমরা কাউকে বাধা দেই না। কারণ এটা এলাকার ঐতিহ্য। লোকজন দেখতে আসলেই আমাদের ভাল লাগে।
সরিষা ফুল দেখতে এবং ছবি তুলতে আসা এসব জান্নাত ইসলাম পরি বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুড়তে আর ছবি তুলতে এসেছি। সরিষার সিজনে প্রোফাইলে সরিষা ফুলের সাথে ছবি আপলোড না দিলে কেমন যেন অপুর্ণতা থেকে যায়। অনেক মজা করছি, ছবি তুলছি, আমাদের সবারই খুব ভালো লাগছে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর যেতে হলে আপনাকে প্রথমে ঢাকার গুলিস্তান থেকে মানিকগঞ্জের বাসে উঠতে হবে। সেখান থেকে আবার লোকাল বাসে চড়ে হরিরামপুর বা ঝিটকা যেতে পারবেন। সারাদিনই এ বাস পাওয়া যায়। এ জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাওয়া ভালো। যাদের সে ব্যবস্থা নেই তারা ভাড়ায় মাইক্রোবাস কিংবা অন্য কোনো গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।
একুশে সংবাদ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :