ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রানার্স কমিউনিটির (বিআরসি) আয়োজনে চার পর্যায়ের দূরত্বে এই হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়।আয়োজক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চার পর্যায়ের দূরত্বে এই হাফ ম্যারাথন দৌঁড় হয়। এর মধ্যে ছিলো ২ কিলোমিটার, ৫ কিলোমিটার, ১০ কিলোমিটার ও ২১ কিলোমিটার।
সকাল ৬ টা ২০ মিনিটে ২১ কিলোমিটারে অংশগ্রহণকারী দলটি স্থানীয় নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। পর্যায়ক্রমে রওনা দেয় ৫ এবং ১০ কিলোমিটারের দলটি এবং সর্বশেষ শিশুদের ২ কিলোমিটারের দলটি সোয়া সাতটায় রওনা দেয়।
২১ কিলোমিটারে অংশ নিয়েছেন ১২০ জন। ১০ কিলোমিটারে ২০০ জন, ৫ কিলোমিটারে ৬০ জন ও ২ কিলোমিটারে ২০ শিশু। এর মধ্যে ৩৫০ জন পুরুষ, ৩০ জন নারী, ২০ জন শিশু এবং পাঞ্চাশোর্ধ ৩৬ জন।
নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে তিতাস নদীর উপর নির্মিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার সংযোগ সড়ক শেখ হাসিনা সড়ক (সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পথে ছড়িয়ে পড়েন দৌড় প্রতিযোগীরা। নির্দেশিত পথে যাঁর যাঁর দূরত্ব অনুযায়ী তাঁরা ছুটে চলেন।
দৌড় শেষে শেখ হাসিনা সড়কের (সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শিমরাইলকান্দি সেতুর দক্ষিণপাশের একটি জমিতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রানার্স কমিউনিটির উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা এডমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয প্রধান অধ্যাপক দিলারা আক্তার খান।
অংশগ্রহণকারী সবার জন্য একটি করে শুভেচ্ছা স্মারক, সনদ, টি-শার্ট, সকালের নাশতার পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারীদের চ্যাম্পিয়ান ও রানার্সআপ ট্রফি দেওয়া হয়।
মোট ৯ টি পর্যায়ে ২৭ জনের মাঝে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি নগদ টাকা দেয়া হয়। সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্সসহ মোট ১০ টি প্রতিষ্ঠান এই আয়োজনে সহায়তা করেন। মেডিকেল সহায়তায় ছিল নোভেল জেনারেল হাসপাতাল। ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবক এই আয়োজন সফলে কাজ করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা তাসমিন তার মেয়ে পারিসা জুনাইরা চৌধুরীকে সাথে নিয়ে এই দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি। ভালো লাগছে। কারণ বর্তমান শিশুরা মুঠোফোনে আসক্ত। দৌঁড় শরীরের জন্য উপকারী। মুঠোফোনের আসক্তি দূরে রাখতে এই দৌড় সহায়তা করবে। আমার মেয়ে অনেক খুশি হয়েছে। আয়োজকদের ধন্যবাদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার উত্তর লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়েফা আক্তার জেসি। পেশায় শিক্ষক। গাজীপুর শাহিন ক্যাডেট একাডেমির ভৈরব শাখার শিক্ষক তিনি। সাথে বাবা মোঃ আলাউদ্দিন ও বর তৌহিদুল ইসলামকে নিয়ে এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তারা প্রত্যেকেই ১০ কিলোমিটার দৌড়েছেন। জুয়েফা আক্তার জেসি বলেন, হাফ ম্যারাথনে এই প্রথমবার অংশ নিয়ে ১০ কিলোমিটার দৌড়েছি। সাথে বাবা ও ভাই ছিল। ভালো লেগেছে। সুস্থ থাকতে সবার দৌড়ানো উচিত।
রানার্স কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের প্রভাষক রাজন মিয়া ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আখাউড়া শহীদ স্মৃতি কলেজের প্রভাষক অলি আহাদকে সাথে নিয়ে ‘শরীর সুস্থ রাখতে’ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তাঁরা বিষয়টি অধ্যাপক দিলারা আক্তারের খানের সাথে পরামর্শ করেন। তিনি প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক দিলারা আক্তার খান বলেন, সবাই মুঠোফোনে আসক্ত। অনেকে আবার মাদকে আসক্ত। শরীর সুস্থ রাখতে এবং মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে আমরা এই আয়োজন করে থাকি। বিভিন্ন জেলা থেকে সাড়া পেয়েছি। ফুল ম্যারাথন বলতে ৪২ কিলোমিটারকে বুঝায়। আগামীদিনে সেটি আয়োজন করতে চাই। বিআরসির প্রধান উদ্যোক্তা প্রভাষক রাজন মিয়া ও অলি আহাদ বলেন, নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় সংগঠনের সদস্যরা প্রতিদিন দৌড়ান। আমাদের একটাই লক্ষ্য। আমরা দৌড়াব, সুস্থ থাকব। আমরা স্মার্ট নাগরিক, রোগমুক্ত ও সচেতন জাতি গঠন করতে চাই। এই উদ্দেশ্যেই আমরা এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেছি।এর আগে কনকনে হিম বাতাস আর কুয়াশাকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলার দৌড় পাগল চার শত নারী-পুরুষ জড়ো হন নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। কেউ বয়সে তরুণ-তরুণী, কেউ শিশু। অনেকেই আবার বয়স্ক। তবে উচ্ছ্বাসে সবাই সমানে সমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পথে দৌড়ানোর জন্য এসেছেন তাঁরা।ভোরের আগেই নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ছিলো উৎসাহী মানুষের ভিড় জমে।
একুশে সংবাদ/আ.য
আপনার মতামত লিখুন :