চট্টগ্রাম আদালতের বারান্দা থেকে ১ হাজার ৯১১টি মামলার নথি (কেস ডকেট বা সিডি) গায়েব হয়ে গেছে। হত্যা, মাদক, চোরাচালান, বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অপরাধের এসব নথি বিচারিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনজীবীদের মতে, নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোতে অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
রোববার (৫ জানুয়ারি), চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভুঁইয়া এ ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় মহানগর পিপির কার্যালয় অবস্থিত, যা কোতোয়ালি মোড়ে অবস্থিত ভবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কার্যালয়ের পাশে মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস ও খাসকামরা এবং আশপাশে অন্যান্য বিচারকের এজলাস। দিনে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ব্যস্ততায় আদালত ভবন মুখর থাকে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ভবনে নিরাপত্তা জোরদার থাকার কথা।
পিপির কার্যালয়ের সামনের বারান্দা থেকে ১ হাজার ৯১১ মামলার নথি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আইনজীবীরা হতবাক।
আদালতের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে মামলার নথি হারিয়ে যাওয়াকে গুরুতর ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, বিচারিক কার্যক্রমে কেস ডকেট (সিডি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগপত্রের সঙ্গে সিডি আদালতে জমা দিতে হয়, যেখানে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার ধারাবাহিক অগ্রগতির বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হলেও নতুন কর্মকর্তা একই সিডিতে তথ্য সংযুক্ত করেন, যা আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সিডি না থাকলে দীর্ঘ সময় পর সাক্ষ্য প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি আরও বলেন, এসব নথি গায়েব করার পেছনে কারা জড়িত, তা উদঘাটন করতে হবে। সম্ভবত আসামিরা মামলায় সুবিধা নিতে এ কাজ করে থাকতে পারে।
সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়া জানান, কক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মামলার নথি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বারান্দায় রাখতে হয়েছিল। হারিয়ে যাওয়া নথির মধ্যে হত্যা, মাদক, চোরাচালান, বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার সিডি অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তদন্তের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি বারান্দায় রাখা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, "আমি কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। নথি সংরক্ষণের জন্য কোনো কক্ষ পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কক্ষ চাওয়া হয়েছিল। বর্তমানে আমার অফিস নথিতে ঠাসা হয়ে আছে।"
কোতোয়ালি থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগর পিপি কার্যালয়ে ২৮ থেকে ৩০টি আদালতের কেস ডকেট সংরক্ষিত ছিল। জায়গা-স্বল্পতার কারণে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে পিপি কার্যালয়ের সামনের বারান্দায় ১ হাজার ৯১১টি মামলার কেস ডকেট প্লাস্টিকের বস্তায় এবং পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় রাখা হয়েছিল। আদালতের অবকাশকালীন ছুটির কারণে ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নথিগুলো হারিয়ে যায়। দীর্ঘ অনুসন্ধানেও নথি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি থানায় ডায়েরিভুক্ত করার জন্য আবেদন করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম জানান, জিডির বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে এবং নথি উদ্ধারের জন্য প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/আ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :