দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন `ইত্যাদি`র অনুষ্ঠানে মারামারি ও চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরে নির্ধারিত সময়ের আগেই পন্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাত ৭টার পরে ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় অবস্থিত রাজা টংকনাথের রাজবাড়িতে আয়োজিত ইত্যাদির অনুষ্ঠান ঘিরে এমন ঘটনা ঘটে।
অনুষ্ঠানের বেশ কিছু মারপিট ও ভাঙচুরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মূহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবি ও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে সমালোচনায় সরব নেটিজেনরা।
পরে স্থগিত করার ঘোষণায় ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের পরিচালক হানিফ সংকেত বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও আপনাদের শান্ত করতে পারলাম না। আপনাদের জন্যই একটি সুন্দর আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। তবে সেটা আর সম্ভব হলো না। পারলাম না, আমি ব্যর্থ।’
স্থানীয় ও আয়োজক সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাজুড়ে ৪ হাজার প্রবেশ শুভেচ্ছা পাশের ব্যবস্থা করেছিল ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ। তবে অনুষ্ঠানে প্রায় লাখ খানেকের বেশি মানুষের সমাগম হয়। একপর্যায়ে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ভাঙচুর ও মারামারি হয়। অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষ একাধিকবার পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। উপায় না পেয়ে অনুষ্ঠানের মাঝপথে এসে স্থগিত করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। দর্শক কিছুটা কমলে এরপর অনুষ্ঠান শুরু করলে আবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। পরে ব্যর্থ হয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
এমন পরিস্থিতির জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শনার্থীরা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন।
নাজমুল হোসেন নামে এক দর্শনার্থী তার ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, অতিরঞ্জিত কোনো কিছু ভালো না। এক দল মানুষ এখন বলবে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ ভালো না। আমি বলব এর দায়িত্বে যারা ছিলেন। হয়তো তারা দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে জানে না, অথবা এর যোগ্যতা তাদের ছিল না।
ইত্যাদি অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়া আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে প্রবেশের পাশ নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। তবুও অনুষ্ঠানে ঢুকতে পারলাম না। এটা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার জন্যেই হয়েছে।
দর্শনার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘এমন অতিরিক্ত দর্শনার্থী উপস্থিতির ধারণা আগে থেকেই ছিল। তবুও কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা। এ ছাড়া এত অল্প জায়গাতে এমন অনুষ্ঠান করা ঠিক হয়নি।’
ইত্যাদি’ অনুষ্ঠান ধারণ দেখতে আসা মাসুদ আলম বলেন, ‘আমি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে প্রবেশের শুভেচ্ছা পাস নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। তারপরও অনুষ্ঠানে ঢুকতে অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রথম থেকেই কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা ছিল না। এটা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার জন্যই হয়েছে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংবাদকর্মী জানান, রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসানের সহযোগিতার জন্যে পাশে দাঁড়াতে চাইলে, উল্টো তিনি, সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সাধারণ মানুষ বলছে যেটা মোটেও কাম্য নয় আমরা একজন নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এটা কখনো আশা করিনি।
তবে এ ঘটনার সম্পূর্ণ দায় উৎসুক জনতাকে দিয়ে অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ।
ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ভাঙচুর মারামারির পরে অনুষ্ঠানস্থল থেকে দর্শকদের বের করে দিয়ে পুনরায় রাত ১১টার দিকে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান `ইত্যাদি`র শুটিং এর কিছু শর্ট পরবর্তীতে আবার শুরু করা হয়। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা পরবর্তীতে সেই ইত্যাদির শুটিং ভালোমতো কেউ উপভোগ করতে পারেনি।
রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক বলেন, মারামারি হয়নি, তবে কিছু দুষ্টু ছেলে চেয়ার ফিকাফিকি করেছে। আর অনুষ্ঠান সময়ের আগেই শেষ করে দিয়েছে। কেউ আহত হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রকিবুল হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :